সামাজিক আচরণ অনুধ্যানে সমাজমিতি পদ্ধতি

সমাজ মনোবিজ্ঞান গবেষণাকাজে অধিক পরিচিত গবেষণা বা তথ্যানুসন্ধান-পদ্ধতি হচ্ছে সমাজমিতি। এ গবেষণা পদ্ধতির অপর নাম গোষ্ঠীনীতি। 

অর্থাৎ,

যে পদ্ধতিতে কোনো গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের জীবনপ্রণালিসহ তাদের সার্বিক কাঠামো ও কর্তৃত্ব সম্পর্কে অবগত হওয়া যায় তাকে সমাজমিতি হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে। 

সমাজ মনোবিজ্ঞানী জে. এল, মরেনো ১৯৪৮ সালে সর্বপ্রথম সমাজমিতি-পদ্ধতি ব্যবহার করেন। সামাজিক গোষ্ঠীর গঠন, প্রকৃতি, সংস্কৃতি প্রভৃতি বিশ্লেষণ ও আলোচনা করার জন্য যে যে পদ্ধতি সমাজ মনোবিজ্ঞানে ব্যবহৃত হয় তার নামই সমাজমিতি। এ পদ্ধতিতে একই গোষ্ঠীভুক্ত ব্যক্তিদের অন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কিত স্বরূপ যেসব আকর্ষণ ও বিকর্ষণের ফলে দৈনন্দিন জীবনে ব্যক্তিদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া অর্থাৎ, পারস্পরিক ক্রিয়া নির্ধারিত হয় তাদের স্বরূপ, ব্যক্তিদের নিজ নিজ সামাজিক প্রতিষ্ঠা, গোষ্ঠীর দৃঢ়তা অনুসন্ধান করা হয়ে থাকে।

একাধিক জনগোষ্ঠী নিয়ে একটি সামাজিক গোষ্ঠী গঠিত। এদের মধ্যে কোন ব্যক্তি কোন মতের পক্ষে, কোন মতের বিপক্ষে, কে তার সাথে একত্র কাজ করে, বসবাস করে, খেলাধুলা করতে, লেখাপড়া করতে আগ্রহী এবং কে কার সাথে মেলামেশা করতে আগ্রহী। প্রভৃতি সমাজমিতি-পদ্ধতির মাধ্যমে জানা যায়। এর মাধ্যমে গোষ্ঠীভুক্ত সদস্যদের একটি লেখচিত্র তৈরি করা যায়। এ লেখচিত্রকে সামাজিক প্রলক্ষণ চিত্রও বলা যায়।

সমাজ বিজ্ঞানী মরেনো ১৯৪৮ সালে প্রথম জেলখানার কয়েদির ওপর তার গবেষণা পদ্ধতি চালান। তিনি প্রত্যক্ষ করেন তারা পরস্পর পছন্দ করে যে দল তৈরি করে তারা বেশ সুসংহত।

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, একজন সমাজ মনোবিজ্ঞানী যে পদ্ধতি ব্যবহার করে সমাজের গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষের চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ও সংহতি প্রকাশ করেন তাকে সমাজমিতি বা গোষ্ঠীমিতি বলা হয়। সমাজমিতি-পদ্ধতির সাহায্যে ব্যাপকতর পরিমাপের মাধ্যমে সামাজিক প্রতিষ্ঠা বা মর্যাদা, সংগঠন এবং বিকাশের সূত্র উদ্ভাবন করা যায়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url