বয়ঃপ্রাপ্তি কালে বিকাশের স্তর সমূহ

ল্যাটিন শব্দ Adultus (যার অর্থ আকৃতি ও শক্তিতে পূর্ণতাপ্রাপ্তি) থেকে Adult শব্দটি এসেছে। এর অর্থ হচ্ছে দৈহিক আকৃতি ও ক্ষমতার পরিণত অবস্থাপ্রাপ্তি অথবা সংক্ষেপে শুধু পরিপক্বতা অর্জন। বয়ঃপ্রাপ্তিকাল এমন একটি সময়, যখন বর্ধন সম্পূর্ণ হয় এবং সমাজে ব্যক্তি হিসেবে মর্যাদা পাওয়া যায়।

বয়ঃপ্রাপ্তি কালের পর্যায়সমূহ 

বয়ঃপ্রাপ্তিকালের সময়কে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১. 

প্রারম্ভিক বয়ঃপ্রাপ্তিকাল 

এই স্তর হচ্ছে ১৮ থেকে ৪০ বছর। পেশা ও সঙ্গী নির্বাচনের প্রস্তুতি এ সময়ের অন্যতম কাজ। এ বয়সে বিয়ে ও পরিবার গঠনের আগ্রহ তৈরি হয়। বয়ঃপ্রাপ্তির শেষভাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো মা-বাবা হিসেবে পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণ। বিয়ের পর দুটি ভিন্ন পরিবেশের দুজন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে খাপ-খাওয়ানো, সন্তান লালন-পালন করা এ সময়ের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাই এ সময় সংসারের বাইরের কোনো বিষয়ে মনোনিবেশের অবকাশ থাকে না। 'এই সময়ের বিকাশমূলক কার্যক্রম হলো:

  1. জীবন-সঙ্গী নির্বাচন করা
  2. পরিবার গঠন করা
  3. গৃহ-পরিচালনা করা
  4. কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করা
  5. প্যারেন্টিং
  6. নাগরিক দায়িত্ব পালন করা
  7. উপযুক্ত সামাজিক দল নির্বাচন করা

২. 

মধ্যবয়স 

৪০ থেকে ৬০ বছর। কাজ থেকে অবসর গ্রহণের সময় পর্যন্ত এই স্তরের ব্যাপ্তি। এটা প্রাপ্তবয়স থেকে বার্ধক্যে অবতীর্ণ হওয়ার মধ্যবর্তী সময়। এই সময় দেশ, সমাজ, সরকার, রাজনীতি ও বিশ্বপরিস্থিতি নিয়ে বন্ধুদের সাথে মতবিনিময় ও আড্ডা এ সময়ের পছন্দের কাজ। এই সময়ের বিকাশমূলক কার্যক্রম হলো

  1. অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা
  2. নাগরিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালন করা
  3. স্বামী বা স্ত্রীর সাথে একজন ব্যক্তি হিসেবে সম্পর্ক স্থাপন করা
  4. শারীরিক পরিবর্তনের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়া
  5. কিশোর বা বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছানো সন্তানদের দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন সুখী মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে সাহায্য করা
  6. বয়সের সাথে সামঞ্জস্য রেখে অবসরকালীন কার্যাবলি নির্বাচন করা
  7. বৃদ্ধ বাবা-মার সাথে মানিয়ে চলা

৩. 

বার্ধক্য বা বয়ঃপ্রাপ্তির শেষকাল

৬০ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এটি মানববিকাশের সর্বশেষ স্তর। বার্ধক্য ক্ষয়ের সূচনা করে। এই সময় শারীরিক, মানসিক অবস্থার ধারাবাহিক অবনতি দেখা যায়। যদি বার্ধক্যে হতাশা, জীবন সম্পর্কে বিরক্তি, মৃত্যুভয় মোকাবিলা করা যার তবে এ সময়টিতে পরিতৃপ্তির অনুভূতি আসে। এই সময়ের বিকাশমূলক কার্যক্রম হলো:

  1. দৈহিক শক্তি ও স্বাস্থ্যের অবনতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়া
  2. অবসর গ্রহণ ও সীমিত আয়ের সাথে জীবনযাপন পদ্ধতির সামঞ্জস্য বিধান করা
  3. সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব পালন করা
  4. সঙ্গীর অসুস্থতা বা মৃত্যুর পরবর্তী অবস্থার সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়া
  5. সমবয়সিদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করা
  6. বার্ধক্যজনিত শারীরিক সমস্যার কথা মাথায় রেখে সুবিধাজনক বাসস্থানের ব্যবস্থা করা

উপসংহার 

বিকাশমূলক কার্যক্রম অনুসারে বয়ঃপ্রাপ্তিকালের পর্যায়সমূহ চিহ্নিত করা যায় এবং উপযোজনমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা যায়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url