বয়ঃপ্রাপ্তিকাল ও বার্ধক্য অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা

প্রথম কারণ হচ্ছে আমাদের জটিল সামাজিক জীবনের মানুষের জীবনকালের বিকাশ সম্পর্কে বুঝতে পারা, যেখানে মানুষের জীবনের এই পরবর্তী সময়ের বিকাশ নিয়ে বেশ কিছু নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। কেউ কেউ মনে করতে পারেন শিশুকাল বা বয়ঃসন্ধির তুলনায় এটি জীবনের অনুদ্দীপ্ত ও নিষ্প্রভ একটি সময়। এটি বিষণ্ণতাদায়ক কারণ সমাজ আমাদের শিক্ষা দেয় যে বার্ধক্য যৌবনের মত এতো ইতিবাচক নয়। আবার অনেকেই মনে করতে পারেন যে শৈশব বার্ধক্যের তুলনায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণ একটি নির্দিষ্ট সময় পর মানুষ আর বিশেষ কোনো প্রভাবের প্রতি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকেন না যা তার পরবর্তী জীবনকে পরিবর্তন করতে পারে। এবং শেষত, কারো কারো মতে বার্ধক্য, জরাগ্রস্ততা, মৃত্যু এগুলো একই সুতোয় গাঁথা, যদি একটি আসে তার সাথে সাথে আরেকটি চলে আসে। আমরা এখানে যা দেখতে পাবো উপরে বর্ণিত কারণগুলো অসত্য এবং কারণগুলোকে আমরা চ্যালেঞ্জ করতে পারি। বার্ধক্যজনিত কিছু মিথ্যা বদ্ধমূল ধারণা থেকে আমরা এমনসব অসত্য বিবরণ তৈরি করে থাকি।

দ্বিতীয়ত, মানুষের এখন গড় আয়ু বাড়ছে। এটি আমাদের সমাজে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও তৈরি করছে। যেমন, রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা বয়স্কদের আর্থিক ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সেবা নিশ্চিত ও সম্প্রসারণ করার জন্য কার্যকরী উপায় খুঁজছেন। পরিবারের উপার্জনকারী ব্যক্তিটি চিন্তা করেন যে পরিবারের বৃদ্ধ ব্যক্তিটির পেছনে তাকে বেশি খরচ করতে হবে কিন্তু সেই তুলনায় তাদের কাছ থেকে কোনো প্রতিদান পাওয়া যাবে না। খন্ডকালীন যে কর্মসুবিধাগুলো ছিল তা আগে যুবকদের আগ্রহের বিষয় ছিল এখন তা বয়স্কদের আকৃষ্ট করছে। এবং এই ক্রমবর্ধমান বয়স্ক জনসংখ্যার কে দেখভাল করবে? তাই পরিবার ও রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমাদের উচিত বৈশ্বিক এই বার্ধক্য বিপ্লব কীভাবে আমাদের প্রভাবিত করছে তা বোঝা।

তৃতীয়ত, কারণটি একটু বাস্তবিক। এই ক্রমবর্ধমান বয়স্ক জনসংখ্যা আমাদের জন্য কিছু কাজের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে, যেমন স্বাস্থ্যসেবা, নার্সিং, ফিজিওথেরাপি, মনোবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, মনোরঞ্জন ইত্যাদি। বার্ধক্য সংক্রান্ত জ্ঞান এই ধরনের সকল পেশার লোকদেরকে আরো কার্যকরীভাবে তাদের সেবা দিতে সাহায্য করবে। 

চতুর্থত, মানুষ নিজের বার্ধক্য নিয়েই পরিকল্পনা করে। তাদেরও বয়স্ক পরিবারের সদস্য ও বন্ধু-বান্ধব থাকে। এই টপিক পড়লে আমরা নিজের ও অন্যদের বার্ধক্য সম্পর্কে জানতে পারবো। এই বইতে ব্যক্তি সম্পর্কিত বেশ কিছু গবেষণার উদাহরণ দেওয়া আছে যা থেকে মানুষ ব্যক্তির বার্ধক্য সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবে। এছাড়াও নিজের বার্ধক্যের ক্যারিয়ার, মাতৃত্ব বা পিতৃত্ব, অবসর, আলঝেইমার্স রোগ ইত্যাদি সম্পর্কে এখানে জানা যাবে।

পঞ্চমত, বলা যায়, বার্ধক্য সম্পর্কে জানা বেশ মজাদার। তারা সমাজের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা দখলে রাখে। তারা সফলতা অর্জন করে, ব্যর্থতা বরণ করে। কেউ হয়তো ক্ষমতা অর্জন করতে চান আবার কেউ হয়তো ক্ষমতায় থাকলে কেমন হয় তা নিয়ে গবেষণা করতে চান। আমরা এখানে বার্ধক্য সম্পর্কে জানবো।

বিকাশের পরিপ্রেক্ষিত থেকে উপরের সকল কারণের প্রতি খেয়াল করা হয় এবং তা কীভাবে আমাদের সমগ্র জীবনকালে একটি পরিবর্তন আনে তা বোঝার চেষ্টা করা হয়। আমাদের জানা উচিত কীভাবে এই বার্ধক্যের জনসংখ্যাকে মানসিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও জৈবিক কারণগুলো প্রভাবিত করছে। অর্থাৎ বিকাশগত পরিপ্রেক্ষিতে সকল ডিসিপ্লিন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে মানুষের বেড়ে ওঠা ও বার্ধক্যতে তা কী প্রভাব ফেলছে তা বের করার চেষ্টা করা হয়। বিকাশমূলক দৃষ্টিভঙ্গি স্থিতিশীলতার ধরনকে চাপে ফেলে দেয় এবং পরিবর্তন করে যা একজন ব্যক্তির জীবনের কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যকে বর্ণনা করে থাকে। একজন ব্যক্তির জীবনের বিভিন্ন ধাপের মধ্যে কৈশোরের ধারণা, মধ্যবয়সে উত্তরণ, অবসরোত্তর অবস্থা ইত্যাদি ধাপগুলো উল্লেখযোগ্য। এই ধাপগুলো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মানুষ প্রচুর চাপের মধ্যে পতিত হয়, সবার তা সমান নয়। আবার বিকাশমূলক যে ধারা তাও সবার মধ্যে এক না-ও হতে পারে। একবার যদি এই বিকাশের ধারণাগুলো কেউ বুঝে ফেলতে পারে তাহলে ব্যক্তিভিন্নতা দেখা যাবে একই সময়ে সামাজিক সাংস্কৃতিক দিকগুলোর দিক দিয়েও।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url