জীবন সঙ্গী নির্বাচন

একবার যদি একজন ব্যক্তি তার বিবাহের সঙ্গী পছন্দ করার প্রস্তুতি নেয়, তাহলে তার এই প্রস্তুতিকে পরিচালিত করে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

১. মিথস্ক্রিয়ার প্রাপ্যতা: 

প্রথমটি হলো, সঙ্গী নির্বাচন করবে এমনভাবে যাতে তার সাথে সহজেই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা যায়। আমরা স্কুল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় এমন ভাবে অনেক পছন্দ নির্বাচন করে থাকি। কারণ স্কুল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সঙ্গীর সাথে আমরা সহজেই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারি। ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাত্রা এখানে একজনের প্রতি আরেকজনের আবেগ বাড়ায় এবং পছন্দ কে ত্বরান্বিত করে। একজন ব্যক্তি যার সাথে বেশি ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তার প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়, নতুন একজন ব্যক্তির চেয়ে।

২. উপযুক্ততা: 

দ্বিতীয়টি হলো, এমন একজন সঙ্গী নির্বাচন করতে হবে যে উপযুক্ত। উপযুক্ততা বলতে সঙ্গী হিসেবে কিছু গুণকে বোঝায় যা তাকে সঙ্গী নির্বাচন করতে সাহায্য করবে। এই উপযুক্ততা বিষয়টি বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের কাছে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। কারো কাছে যে ব্যক্তি সচেতন সেই উপযুক্ত। অন্যদিকে উপযুক্ততা নির্ধারিত হয় ব্যক্তির বয়স, ধর্ম, বর্ণ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, এবং পরিবারের ইতিহাস। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন অবশ্যই সেই ব্যক্তিকে বিয়ে করবে না যে তার ধর্মের উপর বিশ্বাস করে না। এ সকল ব্যক্তির ক্ষেত্রে একই ধর্মে বিশ্বাসী মানুষ উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে। আবার কিছু কিছু মহিলা তাদের চেয়ে একটু বয়স্ক পুরুষ সঙ্গীদের বিয়ে করার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখায়। তারা এটিকে বিয়ের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নির্ধারক হিসেবে দেখায় না। তারা সাধারণত তাদের বয়সের চেয়ে খুব ছোট কিংবা খুব বড় সঙ্গীকে বিয়ে করতে আগ্রহ দেখায় না।

৩. আকর্ষণীয়তা: 

বিয়ের জন্য সঙ্গী নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আরেকটি প্রভাববিস্তারকারী বিষয় হলো আকর্ষণীয়তা। এটা বিভিন্ন মাত্রার হতে পারে। সঙ্গীর প্রতি একটি কথা এমন হতে পারে যে, 'চোখের সৌন্দর্য'। এর মানে হলো তার সকল সৌন্দর্য তার চোখকে ঘিরে। এটি এটাই প্রকাশ করে যে, একজনের কাছে যে ব্যক্তি আকর্ষণীয় অন্যের কাছে সে আকর্ষণীয় না-ও হতে পারে। আকর্ষণীয়তা মূলত নির্ভর করে শারীরিক চেহারা, কর্মদক্ষতা, ব্যক্তিগত গুণাবলি ও অবস্থানের উপর। বেশির ভাগ মানুষ সে সকল সঙ্গীই নির্বাচন করে থাকে যারা তাদের আবেগ-অনুভূতি বুঝতে পারে। তারা কখনই এমন আকর্ষণীয় কাউকে বেছে নেয় না যারা তাদের বিপরীত বিশ্বাস এবং ধারণা বহন করে থাকে, অথবা ভিন্ন ধরনের পরিবার থেকে এসেছে কিংবা এমন কিছু গুণ রয়েছে যা তারা পছন্দ করে না। আকর্ষণীয়তার ক্ষেত্রে ভিন্ন মাত্রাও দেখা যায়। দুই জন মানুষ এমন হতে পারে যে তারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে একই ধরনের বিশ্বাস রাখে যেমন দুই জন ভিন্নধর্মী বা ভিন্ন সামাজিক শ্রেণির মানুষ তারা আবিষ্কার করলো যে তাদের জীবনের লক্ষ্য বা রাজনৈতিক চিন্তা ও ধ্যানধারণা একই ধরনের।

বিভিন্ন কারণে দুই জন ব্যক্তি একজন থেকে অন্যজন ভিন্ন হতে পারে আবার একই রকম হতে পারে। ধর্ম বা সামাজিক শ্রেণিভেদে দুইজন ভিন্ন হতে পারে আবার জীবনের লক্ষ্য বা রাজনৈতিক আদর্শের দিক দিয়ে দুইজন ব্যক্তি একই রকম হতে পারে। আমরা আমাদের প্রসঙ্গ যা আমাদের ব্যক্তিগত পরিচয়ের কেন্দ্রে অবস্থান করে তা নিয়ে যত বেশি সচেতন হব, তত বেশি আমরা অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হবার মতো বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারবে যা একটি অন্তরঙ্গ সম্পর্কের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে।

উপরিউক্ত এই তিনটি কারণ ছাড়াও আরো কিছু বিষয় এগুলোর সাথে প্রভাব বিস্তার করে থাকে বিয়ের ক্ষেত্রে জীবনসঙ্গী নির্বাচন করার সময়। যখন একজন ব্যক্তি তার সম্পর্ককে ভালোবাসার সম্পর্ক হিসেবে প্রকাশ করে, তখন তারা সেখানে সাধারণত প্রগাঢ় এবং দীর্ঘস্থায়ী আবেগের প্রকাশ করে। কিছু তথ দেখায় যে পুরুষেরা ভালোবাসার মানুষদের বিয়ের ক্ষেত্রে বেশি প্রাধান্য দেয় মহিলাদের তুলনায়। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, পুরুষেরা আমাদের সমাজে বিয়ের প্রস্তাব প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url