রিগেলসের দ্বান্দ্বিক বিশ্লেষণ
ক্লস রিগেলস ১৯৭৬-এর দিকে মানব-প্রকৃতির বিকাশ সম্পর্কে দ্বান্দ্বিক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন। অন্য তত্ত্বগুলো যেমন বিকাশের প্রকৃতিকে ধাপের ভিত্তিতে আলোচনা করেছেন রিগেলস তার থেকে স্বতন্ত্র পদ্ধতিতে দেখার চেষ্টা করেছিলেন। তার মতে বিকাশ পরিবর্তনের প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে ঘটে থাকে। তিনি চারটি প্রধান দিক উপস্থাপন করেন- যথা:
- মানসিক প্রক্রিয়ার দিক
- জৈবিক প্রক্রিয়ার দিক
- সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক
- অন্যান্য প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া
প্রতিটি প্রক্রিয়াগত দিক একটি আরেকটির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে হাজির হয়- যেমন, মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ, জৈবিক, সমাজ সাংস্কৃতিক এবং অন্যান্য বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত এবং এদের পরিপূরক। আবার একটি মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ অন্যান্য মনোগত বিষয়কে প্রভাবিত করে। ফলে জীবনচক্রে সমস্যা, প্রশ্ন এবং পরিবর্তনের পথ সৃষ্টি হয়। উদাহরণ-
১। মানসিক দিক - পরিপক্বতা, আবেগী, স্বাধীনতা
২। জৈবিক দিক - বয়ঃসন্ধি, স্বাস্থ্য, উচ্চতা
৩। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক - সামাজিক মনোভাব, সামাজিক আশা-আকাঙ্ক্ষা, সুযোগ-সুবিধা
৪। প্রাকৃতিক বা পরিবেশগত দিক - অর্থনৈতিক অবস্থা, যুদ্ধ, গ্রামীণ/শহুরে জীবন
এই চারটি ভাগ জটিল এবং একটি ধারায় পরিবর্তন অন্য ধারার সাথে সময়ের সামঞ্জস্যতা বজায় রাখে না। এদের মধ্যে এক ধরণের দ্বন্দ্ব মাত্রাবিশেষে উপস্থিত থেকে যায়। মাঝে মধ্যে একটি ধারা অন্য ধারার সম্মুখীন হয় এবং এর কারণে নতুন করে শুরুর দরকার হলে একে রূপান্তর হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
বিকাশের স্থিতিশীলতা বিকাশের বিভিন্ন ধাপে বিভিন্ন পরিবর্তন ও রূপান্তরের দিকে জোর দেয়ার জন্য, বিভিন্ন ধরনের গবেষণা প্রস্তাব করা হয়। কস্তা ও ম্যাকক্রে (১৯৮০, বি) একটি প্রতিবেদন দেন যেখানে বলা হয়, যখন ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য পরিমাপ করা হয়, সেখানে বেশির ভাগ মানুষের বিকাশের ক্ষেত্রে পরিবর্তনের কিছু প্রমাণ লক্ষ্য করা যায়- যেমন, লেভিনসনের মডেল অনুযায়ী, তারা কোনো ধরনের গবেষণা ফলাফল পাননি মধ্যবয়সের সন্ধিক্ষণ নিয়ে পুরুষদের ক্ষেত্রে। অন্যান্য গবেষণা কোনো ধরনের তথ্য দিতে পারেনি প্রাপ্তবয়স্কদের বিকাশের ধাপগুলোকে সমর্থনের জন্য (Haan, 1981; Vaillant, 1977)। কস্তা ও ম্যাকক্রে এই বলে শেষ করেন যে বিকাশমূলক তত্ত্বগুলোর পরিবর্তনের তুলনায় যে বৈশিষ্ট্যগুলো প্রাপ্তবয়সে একই অবস্থায় থাকে সেগুলোর উপর বেশি জোর প্রদান করা উচিত।
বয়ঃপ্রাপ্তদের বিকাশের স্থিতিশীল মডেল ও ধাপ মডেলের মধ্যে বিদ্যমান অসঙ্গতি পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যা খুবই কম গুরুত্বপূর্ণ এর দৃশ্যমান দিক থেকেও। আমরা সবাই এটা স্বীকার করি যে একজন ব্যক্তির কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেগুলো সারা জীবনই স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে। আমাদের পিতামাতা, বন্ধু-বান্ধব ও সহকর্মীরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যান। কিন্তু তারা পূর্বের তুলনায় ভিন্ন মানুষে পরিণত হয়ে যান না। কস্তা ও ম্যাকক্রে (১৯৮০, বি) ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো পরিমাপ করেন এবং আশা করা হয়েছিল যে সেগুলো সময়ের বিবর্তনেও স্থিতিশীল থাকবে। এমনকি বিকাশের রূপান্তরগুলোর সময়েও অথবা সংকটমুহূর্তেও (বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, পিতৃ- মাতৃত্ব, চাকরি বা পেশা পরিবর্তন, মধ্যবয়সি হওয়া অথবা অবসর গ্রহণ করা ইত্যাদি)। ৩৫ থেকে ৭৯ বছর বয়সের ২৩৩ জন পুরুষকে নিয়ে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা যত বেশি মধ্যবয়সি সংকটের অভিজ্ঞতা লাভ করেছে তাদেরকে মধ্যবয়সি মনে হতো না, বরং তাদেরকে পরিমাপ করা হয়েছে স্নায়ুবিক পীড়াগ্রস্ত হিসেবে। কিছু কিছু ব্যক্তি তাদের মধ্যবয়সে একটি স্তরের সংকটময় সময় পার করে অভিজ্ঞতালব্ধ হয়েছে ভিন্ন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ধরনের মানুষদের তুলনায়। অন্যথায় ব্যক্তিত্বের ধারণাগুলো সবসময় স্থিতিশীল হতো।