প্রাপ্তবয়সের বিভিন্ন পর্যায়

 প্রারম্ভিক প্রাপ্তবয়স হলো এমন একটি বয়স যেখানে নতুন ধরনের একটি জীবন এবং নতুন সামাজিক প্রত্যাশার সাথে মানুষ অভিযোজিত হয়। এখানে প্রত্যাশা করা একজন তরুণ পিতা/মাতা, স্বামী/স্ত্রী অথবা পরিবারের জীবিকার্জক কর্তা হিসেবে ভূমিকা পালন করবে। এই ভূমিকাগুলোর সাথে সাথে নতুন নতুন আচরণ, আগ্রহ এবং মূল্যায়নও গড়ে উঠবে। প্রাপ্তবয়সের প্রারম্ভে এই উপযোজনের ক্ষেত্রে প্রচুর সমস্যায় পড়তে হয়। কিন্তু এসময় তাদেরকে উপযোজনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে থাকে তাদের পিতা-মাতা, শিক্ষক, বন্ধু-বান্ধব এমনকি পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। এই সময়ের সফল উত্তরণের জন্য কিছু বিকাশমূলক কার্যাবলী ব্যক্তিকে করতে হয়। এগুলো নিম্নরূপ- 

প্রারম্ভিক বয়ঃপ্রাপ্তকালের বিকাশমূলক কার্যাবলী

প্রারম্ভিক বয়ঃপ্রাপ্তকালে একজন ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে যা তাকে তার লক্ষ অর্জনে বা কর্ম সম্পাদনের জন্য সহজ হয়। নিম্নে প্রারম্ভিক বয়ঃপ্রাপ্তকালের বিকাশমূলক কার্যাবলি আলোচনা করা হলো-

১. সঙ্গী নির্বাচন: 

এরিকসনের দৃষ্টিতে তরুণ তরুণীদের জন্য ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল কাজ। একটা বিশ্বস্ত, স্থায়ী, ঘনিষ্ঠ, যত্নশীল সম্পর্ক মানুষের আচরণের জন্য প্রেরণা উৎস হিসাবে কাজ করে।

জীবন সাথী নির্বাচন করা একই সাথে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং বিরক্তিকর কার্যক্রম। বাংলাদেশে নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারে এখনও সঙ্গী নির্বাচনের দায়িত্ব বাবা-মা বহন করে।

২. সঙ্গীর সঙ্গে উপযোজন: 

আন্তঃব্যক্তিগত সম্পর্কগুলোতে বিবাহের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিবাহের প্রথম দুই এক বছরের মধ্যে দম্পতিরা সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ উপযোজন সেরে ফেলে, যেমন- একে অপরের প্রতি, পরিবারের সদস্যদের প্রতি এবং বন্ধুদের প্রতি। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উত্তম বৈবাহিক উপযোজন হলো স্বামী ও স্ত্রীর তাদের একে অপরের প্রতি আবেগীয় সম্পর্ক তৈরির এবং ভালোবাসা পাওয়া ও দেয়ার দক্ষতা।

৩. পিতৃত্ব-মাতৃত্ব উপযোজন: 

প্রাপ্তবয়সের দায়িত্ব পালনের এবং পরিপক্বতা অর্জনের ক্ষেত্রে মূল নির্ণায়ক হিসেবে মনে করা হয় সন্তানের জনক ও জননী হওয়াকে। সন্তানের পিতামাতা হবার সাথে প্রশ্নাতীত ভাবে পরিতৃপ্ততা আসে। এটাকে আবার জীবনের একটি সংকটময় সময় বলা হয়ে থাকে কারণ তখন আচরণ, মূল্যবোধ ও ভূমিকার প্রচুর পরিবর্তন আনার দরকার পড়ে।

৪. গৃহ পরিচালনা: 

সকল সমাজেই নারীদের প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে পারিবারিক কাজকর্ম করা এবং সন্তান লালন-পালন করা। যদি তারা চাকরি কিংবা পেশা নিয়ে ব্যস্ত থাকে তবুও তাদের এসব দায়িত্ব পালন করতে হয় (Gariner & Kosmizki, 2005)। দ্বৈত আয়ের পরিবারে পুরুষদের সাংসারিক কাজ ও সন্তান লালন-পালনের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারী ও পুরুষ উভয়ই পারিবারিক কাজের জন্য নিজেদের অবসর সময় উৎসর্গ করে।

৫. শিক্ষা-সমাপন ও কর্মজীবনে প্রবেশ: 

অতীতে মানুষ সরাসরি তার বিদ্যালয়ের জীবনের পর কর্মজীবনে প্রবেশ করতো এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা প্রত্যাশা করতো। বর্তমানে বয়ঃপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নির্দিষ্ট করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না যে আগামী ১০ বছরে সে কী করবে। কেউ শিক্ষার পরিবর্তে জীবিকা, আবার কেউ জীবিকার পরিবর্তে শিক্ষাকে বেছে নেয়, আবার অনেকে একই সময়ে দুটো পরিচালনা করে থাকে (ফার্স্টেনবার্গ ও তার দল, ২০০৫)।

৬. বৃত্তিমূলক অভিযোজন: 

একটি কাজে প্রবেশ করা মানে পেশা নির্বাচন নয়। কিন্তু এটি হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে ব্যক্তি কাজের সাথে মিলবন্ধন তৈরি করতে পারে। পেশাগত ভূমিকা এবং প্রত্যাশা দ্বারা সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াকে গতিশীল করে। সামাজিকীকরণ মাধ্যমগুলো পেশা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এগুলো শিক্ষাবিষয়ক, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক অভিজ্ঞতাকে বর্ণনা করে। বয়ঃপ্রাপ্তিকালে বিকাশমূলক কার্যাবলীর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো বৃত্তি নির্বাচন ও বৃত্তিমূলক উপযোজন। জীবিকা নির্বাহের প্রধান শর্ত হলো বৃত্তি নির্বাচন ও প্রবেশ। বৃত্তিমূলক উপযোজন ব্যক্তির বয়স কিংবা দৈহিক শক্তির উপর নির্ভর করে না; বরং দক্ষতা ও যোগ্যতা ও সক্ষমতার উপর নির্ভর করে। 

৭. নাগরিক দায়িত্ব গ্রহণ: 

বয়ঃপ্রাপ্তিকালে পারিবারিক গন্ডির বাইরেও প্রতিবেশী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতি দ্বায়িত্ব পালন করতে হয়। প্রারম্ভিক বয়ঃপ্রাপ্তিকালে প্রথম ভাগে শিক্ষা সমাপন, চাকরি, বিয়ে, সন্তান জন্ম দান-লালন-পালনে অধিক ব্যস্ত থাকায় বাইরের বিষয়ে মনোযোগী হতে পারে না। পারিবারিক দ্বায়িত্বে স্থিতি আসার পর অর্থাৎ সন্তান বড় হওয়ার পর এবং চাকরিতে পদোন্নতি হরে ব্যক্তি নাগরিক দায়িত্বে নিজেকে নিয়োজিত করে।

৮. সমমনোভাবসম্পন্ন সামাজিক দলে অন্তর্ভুক্তি: 

বিয়ের পর, চাকরিতে যোগদানের পর, পদোন্নতির পর সর্বোপরি সামাজিক মর্যাদা ও আগ্রহের ভিত্তিতে একই মনোভাবসম্পন্ন ব্যক্তি বা দলে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে।

উপসংহার: 

পরিশেষে বলা যায় যে, জীবন ব্যাপ্তিতে বয়ঃপ্রাপ্তিকাল হলো এমন একটি সময় যখন মানুষ প্রচন্ড সংবেদশীল, গতিশীল ও জানার জন্য প্রস্তুত থাকে। পড়াশোনা, চাকরি, বিয়ে, সন্তান জন্মদান, লালন-পালন ইত্যাদি নিয়ে পুরুষ ও মহিলা উভয়কেই ব্যস্ত থাকতে হয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url