প্রাপ্তবয়সে বৃত্তিমূলক অভিযোজনের উপাদানসমূহ

বয়ঃপ্রাপ্তিকালে বিকাশমূলক কার্যাবলীর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো বৃত্তি নির্বাচন ও বৃত্তিমূলক উপযোজন। জীবিকা নির্বাহের প্রধান শর্ত হলো বৃত্তি নির্বাচন ও প্রবেশ। বৃত্তিমূলক উপযোজন ব্যক্তির বয়স কিংবা দৈহিক শক্তির উপর নির্ভর করে না; বরং দক্ষতা ও যোগ্যতা ও সক্ষমতার উপর নির্ভর করে।

বৃত্তিমূলক অভিযোজনের উপাদানসমূহ

নিম্নে বৃত্তিমূলক উপযোজনে প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানসমূহ আলোচনা করা হলো-

১. শিক্ষার স্তর: 

শিক্ষার স্তর ব্যক্তিকে কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। অশিক্ষিত ব্যক্তি চেয়ে লেখাপড়া জানা ব্যক্তিরা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে অতি সহজেই নিজেদের আয়ত্তে আনতে সক্ষম হয়। ফলে শিক্ষিত ব্যক্তির বৃত্তিমূলক উপযোজন সহজ হয়। 

২. প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা: 

কাজের শুরুতে ব্যক্তির যথাযথ প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা না থাকলে, কাজের প্রতি অনীহা ও অসন্তুটিষ্ট দেখা দেয়। তাই প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা বৃত্তিমূলক উপযোজনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে যারা অভিজ্ঞ এবং প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত তারা কর্ম পরিবেশে অধিক সক্রিয় ও উৎপাদনশীল থাকে।

৩. প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি: 

প্রতিনিয়ত নানা রকম প্রযুক্তি আমাদের কাজে সংযুক্ত হচ্ছে। এই প্রযুক্তির ব্যবহার বৃত্তিমূলক উপযোজনের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। যেমন- যেমন- একঘেয়েমি, কাজ করার গর্ব কমে যাওয়া, চাকরি খোয়ানোর চিন্তা, বর্ধিত গতির চাহিদা ইত্যাদি কর্মীকে আরো স্নায়বিকভাবে দুর্বল করে ফেলে। তাই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার প্রশিক্ষণ না থাকলে বৃত্তিমূলক উপযোজন ব্যাহত হয়।

৪. স্থানান্তর: 

চাকরি ধরে রাখার জন্য এবং প্রোমোশনের জন্য স্থানান্তরকে কর্মী কীভাবে নিচ্ছেন এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে কর্মীর কাজের উপযোজনের উপর। ক্ষুদ্র ব্যবসায় ধীরে ধীরে বড় বড় কর্পোরেশনে পরিণত হচ্ছে আর কর্মীদেরকে বাধ্য করছে স্থানান্তরে। যেহেতু ফ্যাক্টরি স্থানান্তরিত হচ্ছে। স্থানান্তর পরবর্তী উপযোজন বৃত্তিমূলক উপযোজনের প্রভাব বিস্তার করে থাকে।

৫. পদন্নোতির সুযোগ: 

পদোন্নতি সংগঠনে ব্যক্তির অগ্রগতির সোপান স্বরূপ। অন্যান্য আর্থিক সুবিধার পাশাপাশি কর্মীর সময় মত পদোন্নতি সুযোগ থাকলে ব্যক্তি প্রেষিত ও সন্তুষ্ট থাকে। উক্ত সুবিধা না থাকলে কর্মীর মধ্যে অসন্তুষ্টি কাজ করে।

৬. কর্ম পরিবেশ: 

কর্ম পরিবেশ বৃত্তিমূলক উপযোজনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে থাকে। সুস্থ ও সুন্দর ও নিরাপদ কর্ম পরিবেশে বৃত্তিমূলক উপযোজন ও পেশাগত উন্নয়ন সহজ হয়। অন্যদিকে কর্ম পরিবেশের দুর্ঘটনা ব্যক্তির মনে উদ্বিগ্নতা এবং অসন্তুষ্টি তৈরি করে।

৭. বড় প্রতিষ্ঠানের প্রতি মনোভাব: 

যেসকল কর্মী কোনো বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারার জন্য নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন তাদের ভবিষ্যৎ কাজের উপযোজন যারা সেই প্রতিষ্ঠানে নিজেকে চুনোপুটি মনে করেন তাদের তুলনায় ভালো হবার সম্ভাবনা বেশি।

৮. সহকর্মীর প্রতি মনোভাব: 

প্রতিষ্ঠানে যথাযথ সামাজিকরণ প্রক্রিয়ার অনুশীলন থাকলে সহকর্মীর সাথে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। সহকর্মীর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব কাজের প্রতি উদাসীন ও অমনোযোগী করে তোলে। আবার, সহকর্মীর প্রতি ইতিবাচক মনোভাব নির্দেশনা প্রদান ও বাস্তবায়নে আন্তরিকতার সৃষ্টি করে থাকে।

৯. কাজের সন্তুষ্টি: 

যেসকল নারী-পুরুষ তাদের কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট তাদের; যারা কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট নয় তাদের তুলনায় পেশাগত উপযোজন বেশী। যারা কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট নন তারা হয়তো পারিবারিক দায়িত্বের কারণে কাজটি করতেন এবং এখানে নিজেকে বন্দী মনে করছেন।

১০. জেন্ডার: 

বর্তমান কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের আবির্ভাব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা যায় যে, পুরুষদের তুলনা মহিলাদের উচ্চাভিলাষ ও আত্মোন্নয়নের চিন্তাভাবনা অনেকটা কম। মহিলারা সাধারণত কর্মের অন্যান্য উপাদানের চেয়ে ভাল কার্য শর্ত, পরিবেশ ও মানবীয় সম্পর্কের উপর অধিক গুরুত্ব প্রদান করে। এ কারণে তুলনামূলকভাবে পুরষদের চেয়ে মহিলাদের কার্য সন্তুষ্টির হার বেশি। আবার জেন্ডার ভূমিকা অনুসারে সকল কাজে নারীরা পারদর্শি নয়। তাই বৃত্তিগত উপযোজনে জেন্ডার পার্থক্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পরিশেষে বলা যায় যে, উপরোক্ত উপাদানসমূহ ছাড়াও ব্যক্তির শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার সাথে তার কাজের সমঞ্জস্যতা, আর্থ- সামাজিক অবস্থা, ব্যক্তিগত আগ্রহ ও ব্যক্তিত্ব প্রভৃতিও বৃত্তিমূলক উপযোজনের প্রভাব বিস্তার করে থাকে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url