মধ্যবয়সের বৈশিষ্ট্যসমূহ
৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সকে মধ্যবয়স বলে ধরা হয়। এই সীমানাকে শারীরিক মানসিক পরিবর্তনের একটা সময় হিসাবে মনো করা হয়। ৬০ বছর বয়সে শারীরিক সক্ষমতা নিম্ন পর্যায়ে যাওয়ার পাশাপাশি মানসিকভাবে সজাগ থাকা বা সক্রিয়তা অনেকাংশে হ্রাস পায়। যদিও অনেকে এই বয়সসীমার পরে গিয়েও এ ধরনের অভিজ্ঞতা লাভ করে তবুও প্রথাগত সামাজিক বয়সসীমা এটাই। অনেককে দেখা যায় ৬০ বা ৬৫ বছর বয়সে চাকরী, কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর নেয়। ৬০ বছরে অবসর নেয়ার পরিমান অনেক বেশী। তাই এদিক থেকেও ৬০ বছরকেই মধ্য ও বৃদ্ধ বয়সের সীমানা লাইন বলা যায়।
মধ্যবয়সের বৈশিষ্ট্য
অন্যান্য বয়সকালের মতো মধ্যবয়সের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেগুলো এটিকে অন্যান্যগুলো থেকে আলাদা করে তোলে। এ বয়সের দশটি বৈশিষ্ট্য নিম্নে আলোচনা করা হলো।
১) ভীতিকর সময়:
মধ্যবয়সের প্রথম বৈশিষ্ট্য এটি জীবনের সবচেয়ে ভীতিকর সময়। বৃদ্ধ হওয়ার ভয়ের পরেই মধ্যবয়সী হওয়ার ভয় মানুষের মধ্যে কাজ করে। কোন মধ্যবয়সী ব্যক্তি নিজেকে মধ্যবয়সী বলতে স্বাছন্দবোধ করে না এমনকি স্বীকারও করে না যতক্ষণ তাদের ক্যালেন্ডার ও আয়না বাধ্য না করে। Desmond-এর মতে, ব্যক্তি দুঃখ ভরাক্রান্ত এবং ক্ষোভ নিয়ে মধ্যবয়সে পদার্পণ করে।
২. পরিবর্তনের সময়:
কৈশোর যেমন শিশু থেকে বয়ঃসন্ধিকালে পরিবর্তন হওয়ার একটা সময়; তেমনি মধ্যবয়স প্রাপ্তবয়স্ক থেকে বৃদ্ধ বয়সে যাওয়ার একটা ধাপ। এই সময় নারী ও পুরুষ উভয়ই তাদের যৌবনকালের শারীরিক ও আচরণগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে নতুন বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। এটা বলা হয়ে থাকে মধ্য বয়সে পুরুষেরা পুরুষত্ব এবং নারীদের প্রজনন ক্ষমতা পরিবর্তন হয়। Bradwick এর মতে মধ্যবয়সে আমেরিকানদের কর্মক্ষেত্রে, পেশায় সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে।
পরিবর্তন মানেই নতুন প্রত্যাশা, নতুন মূল্যবোধ, আশা, আকাঙ্খা, আচরনের সাথে নিজেকে মানিয়ে চলা। যত আগে হোক বা পরে হোক মধ্যবয়সে আসার পর তাদের একটা সময় মানিয়ে চলতেই হয়ে। এ বয়সের ব্যক্তিরা বুঝতে পারে তরুণ বয়সে যে ধরণের আচরণ করেছিল এখন তার বিপরীত আচরণ করতে হবে। নিজের ভূমিকা পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে চলার থেকে শারিরীক পরিবর্তনের সঙ্গে মনিয়ে চলা কঠিন হয়। উল্লেখ্য যে, এই বয়সে নারী পুরুষের সম্পর্ক এক অপরের প্রতি কেন্দ্রীভূত হয় যা প্রাপ্তবয়স্ক থাকার সময়কালে অভিভাবকের ভূমিকায় ছিলো।
গৃহে পুরুষের ভূমিকা পরিবর্তনের পাশাপাশি চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ এবং শারীরিক অবস্থার সাথে মানিয়ে চলতে হয়। নারীদের ক্ষেত্রে চাকুরী থেকে অবসরের পর গৃহবধূ হিসাবে অথবা চাকুরীজীবী সন্তানের মাতা হিসাবে অথবা অনেক ক্ষেত্রে শুন্য বাড়ীতে একাকী থাকতে হয়। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পরিবর্তনের ফলে একেকটা সঙ্কট দেখা দেয়। Kimmel-এর মতে ৩টি সার্বজনীন সঙ্কটমূলক অবস্থা মধ্যবয়সে প্রায় সবার মধ্যে দেখা যায়, তা হলোঃ
- প্রথমত, প্যারেন্টিং সঙ্কট, এ ধরণের সঙ্কট দেখা যায় যখন সন্তান পিতা-মাতার প্রত্যাশা পুরণ করতে পারে না। তারা চিন্তা করে, আমরা কী ভুল করেছি, কোথায় করেছি তা বিশ্লেষণ করে।
- দ্বিতীয়ত, সঙ্কট দেখা যায় যখন মধ্যবয়সী দম্পতির সাথে তাদের বৃদ্ধ পিতা-মাতা থাকে। অনেকে বৃদ্ধ পিতা মাতাকে তাদের সাথে থাকাটা পছন্দ করে না। কিন্তু পিতা মাতা দুরে চলে যাবে তা মেনেও নিতে পারে না এবং নিজেদের দোষারোপ করে।
- তৃতীয়ত, একাকীত্ব সঙ্কট দেখা দেয় যখন মৃত্যুর সাথে মানিয়ে চলতে হয়। বিশেষত্ব দম্পতিদের দুই জনের যে কোন একজনের মৃত্যু হলে। Kimmel এর মতে এ সময় 'আমি কীভাবে বাকিটা পথ চলবে'-এ ধরনের লক্ষণ দেখা যায়।
৩. পীড়নমূলক সময়:
মধ্যবয়সে একজন নারী বা পুরুষের নানা রকম পীড়নমূলক অবস্থার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়। পরিবার, পেশা, সমাজ, শারীরিক অবস্থা ইত্যাদির সাথে ক্রমাগত নিজেকে মানিয়ে নিতে গিয়ে শরীরিক ও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। ফলে একটা পীড়নমূলক অবস্থার সৃষ্টি হয়। Marmor সাধারণ পীড়নমূলক অবস্থার উৎসকে চারটি ভাগে ভাগ করেছে:
- দৈহিক পীড়ন: যা শারীরিক পরিবর্তনের ফলে হয়ে থাকে।
- সংস্কৃতিক পীড়ন: সমাজে মধ্যবয়সীদের চেয়ে তরুণ, যুবকদের বেশী মূল্যায়ন করা হয়। এর ফলে মানসিক চাপ তৈরী হয়।
- অর্থনৈতিক পীড়ন: সন্তানদের ভরণ-পোষণ এবং পরিবারকে একটি ভালো মর্যাদা দেয়ার জন্য অর্থনৈতিক চাপ আসে।
- মানসিক পীড়ন: যা একজন দম্পতির মৃত্যু, নিঃসঙ্গ হওয়া, সন্তানদের গৃহ ত্যাগ, তারুণ্যকে হারানো ইত্যাদির ফলে এই চাপ আসে এবং মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
পীড়নমূলক অবস্থার ক্ষেত্রে জেন্ডার ভেদে পার্থক্য দেখা দেয়- যেমন: নারীদের ক্ষেত্রে ৪০ বছরের শুরুর দিকে ঋতুবন্ধ বা মেনোপজ দেখা দেয় এবং সন্তান গৃহত্যাগ করে ফলে শারীরিক ভারসাম্যহীনতার পাশাপাশি মানসিক চাপের মধ্যে পড়ে। অন্যদিকে পুরুষের সঙ্কটকালীন অবস্থা নারীদের চেয়ে পরে আসে।
৪. বিপদজনক বয়স:
মধ্যবয়সের চতুর্থ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটিকে সাধারণত বলা হয় জীবনের সবচেয়ে বিপদজনক বয়স। এই বিপদজনক বয়সকে ব্যাখ্যা করতে সাধারনত পুরুষ মানুষের জীবনের, বিশেষ করে যৌনজীবনের দিক থেকে, শেষ স্বাদ উপভোগ করার ইচ্ছাকে দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়- যেমন Archer এর মতে (৩):
তার আশেপাশের লোকজনের কাছে হয়তো মনে হতে পারে যে এই মধ্যবয়সি লোকটির বিকার ঘটেছে, সম্পূর্ণ এলোমেলোভাবে নতুন নতুন ক্রিয়াকলাপ বা অভিজ্ঞতার প্রকাশ ঘটাবেন তিনি। এই বয়সের বিভিন্ন পর্বে বৈবাহিক সম্পর্ক বহির্ভূত সম্পর্ক, মদ্যপান ইত্যাদি নাটকীয়ভাবে দেখা দিতে পারে। কারো কারো জন্য মধ্যবয়সের এই সংকট আজীবনের জন্য স্থায়ী সমস্যা ও বাধা হিসেবে থেকে যেতে পারে।
মধ্যবয়স আরো অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে বিপদজনক হতে পারে। এই সময়ে মানুষ কাজ, দুশ্চিন্তা, বেখেয়ালি জীবনযাপন ইত্যাদির ভারে ভেঙে পরে। মানসিক অসুস্থতার এই দৃষ্টান্তগুলো পুরুষ এবং নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই দেখা দেয় এবং এটি পুরুষদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে আত্মহত্যাপ্রবণ সময়। এই বিষয়গুলো পরবর্তীতে আলোচনা করা হবে।
ভাল উপযোজন্বয়ের পক্ষে হুমকিগুলো যখন মধ্যবয়সকে আরো বিপদজনক করে তোলে, শারীরিক ও মানসিক উপযোজনয়ের ব্যাপারে ভারসাম্যহীনতা ঘটার সময়ে, পুরুষ ও নারীর মধ্যেকার কিছু জেন্ডারবৈষম্য বিষয়টিকে আরো ঘনীভূত করে ফেলে। পুরুষদের তথাকথিত "মধ্যবয়সের বিদ্রোহ" সাধারণত মহিলাদের ঋতুবন্ধ এর কারণে যে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয় তার সাথে মিলে যায়। এটা শুধু স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করে না বরং ছাড়াছাড়ি বা ডিভোর্স এর দিকে নিয়ে যায় এবং কখনো কখনো এটি পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন বা ডিভোর্স এর পূর্বে শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা, মাদকাসক্তি, নেশা এবং আত্মহত্যার প্রবণতা জন্মায়।
৫. হতবুদ্ধিকর বয়স:
মধ্যবয়সকে একটি হতবুদ্ধিকর বয়স বলা হয়েছে। ঠিক যেমন বয়ঃসন্ধিকালের তরুণরা না শিশু না প্রাপ্তবয়স্ক ঠিক তেমনি মধ্যবয়সীরা না তরুণ না বৃদ্ধ। Franzblau বলেছেন, মধ্যবয়সী ব্যক্তিরা তরুণ এবং বৃদ্ধ উভয়ের মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে এবং উভয় বয়সের আচরণের দ্বারা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে।
মধ্যবয়সী ব্যক্তিরা এমন অবস্থায় পড়ে যেন সমাজে তাদের কোন স্বীকৃত জায়গা নেই। ফলে তারা নিজেদেরকে লুকিয়ে রাখে। Times Magazine-এর একটা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিরো আমেরিকান মধ্যবয়সীরা নিরবতার যড়যন্ত্রে আছে যারা নিজেকে "মধ্য বয়সী" বরতে দ্বিধাবোধ করে। মধ্যবয়সীরা নিজেদেরকে যে লুকিয়ে রাখে তার বড় প্রমান হলো তারা এমন পোশাক ব্যবহার করে যেটা ঐ সময়ে চলমান।
মধ্যবয়সী পুরুষ এবং মহিলাদের প্রচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ার যে ইচ্ছা তা তাদের পোশাকে প্রতিফলিত হয়। বেশিরভাগ মধ্যবয়সী লোকেরা যতটা সম্ভব রক্ষণশীল পোশাক পরিধান করার চেষ্টা করে এবং পাশাপাশি সচরাচর চলমান রীতিও অনুসরন করে (৮৬)। এই রক্ষণশীলতার নীতি তাদের সম্পত্তির অধিকার ভোগের পছন্দ, যেমন- বাড়ি, গাড়ি এবং আচরণের নমুনা (তারা কিভাবে আনন্দ উপভোগ করে অথবা কীভাবে নাচে ইত্যাদি)। তারা যতটাই প্রচ্ছন্ন হয়, ততটাই নিজেকে কম সমাজচ্যুত বা অযথাযথ মনে করে, যে সমাজ এখনও যৌবনের পূজারী হিসেবে বিবেচিত।
৬. অর্জনের সময়:
Erikson এর মতে মধ্যবয়সে ব্যক্তির মধ্যে 'উৎপাদনশীলতা' বা উৎপাদন অর্জন করার প্রবণতা অথবা স্থবিরতা- এই দুইটা অবস্থা প্রভাববিস্তার করে। তার মতে মধ্যবয়সে ব্যক্তি হয় আরোও উন্নতি করে অথবা স্থবির হয়ে যায়। যদি কোন ব্যক্তি অর্জন করার ইচ্ছা, উচ্ছপর্যায়ে যাওয়ার আকাঙ্খা থাকে তবে সে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এই মধ্যবয়সেই তার কাঙ্খিত অবস্থান অর্জন করতে পারবে।
পুরুষের ন্যায় নারীরাও যারা পূর্বে কঠোর পরিশ্রম করে মধ্যবয়সে এসে তার অবস্থানের সর্বোচ্ছ পর্যায়ে যায়। যদিও তাদের সংখ্যা পুরুষের চেয়ে অনেক কম। যেসব নারী প্রাপ্তবয়স্কের সময় গৃহবধু হিসাবে সংসারে থেকেছে সন্তান লালন পালন করেছে এবং সন্তান বড় হয়ে যাওয়ার পর আবার কর্মক্ষেত্রে যোগদান করে তাদের খুব সচেষ্ট হতে হয়।
মধ্যবয়স শুধু সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়েই সফলতা নিয়ে আসে না, কর্তৃত ও সম্মানের দিক দিয়েও সফলতা আনে। সমাজের যে কোন নীতিনির্ধারকের অবস্থানে যেমন মধ্যবয়সি থাকে, তেমনি কোন কিছুর দায়িত্ব বা কর্তৃত্বের দিক দিয়েও মধ্যবয়সিরা থাকে।
নারী ও পুরুষ উভয়ে মধ্যবয়সে তাদের শিল্প, ব্যবসা, সংস্থা, সমাজ থেকে পুরস্কারস্বরূপ সর্বোচ্ছ পদ অর্জন করে। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মীরা তাদের চেয়ারম্যান হিসাবে মধ্য বয়সী ব্যক্তিকে মনোনীত করে। কারণ নেতৃত্ব প্রদান মধ্যবয়সীদের নিয়েই হয়ে থাকে এবং কর্মীরা এ বয়সকে 'নেতৃত্ব প্রজন্ম' বলে অভিহিত করে।
মধ্যবয়সি ব্যক্তিরাও বিভিন্ন জায়গায় আদেশ প্রদান করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। Neugarten বলেছেন, একজন সফল মধ্যবয়সী ব্যক্তি নিজেকে কখনো "পরিচালিত" বলেন না তারা নিজেদেরকে অল্প সময়ের জন্য হলেও পরিচালক হিসাবে সম্মোধন করে।
৭. মূল্যায়নের সময়:
মধ্যবয়সে ব্যক্তি তার অবস্থানের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছায়, তাই এ পর্যায়ে নিজস্ব মূল্যায়ন করা যা তার অর্জন এবং প্রত্যাশিার সাথে কতটা সংগতি আছে তা পর্যবেক্ষণ করা খুবই যুক্তিযুক্ত। Archer- এর মতে ২০ বছর বয়সে আমরা পেশা নির্ধারণ এবং বিবাহের সংকল্প করি এবং ৪০ বছর বয়সে নিজেদেরকে সেই সংকল্পের সাথে কতটুকু রাখতে পেরেছি তা পর্যালোচনা করি।
Archer আরো বলেচেন মধ্যবয়সে খুবই বাস্তবিক চিন্তা-ভাবনা করে থাকে উঠতি বয়সে মানুষ নানা রকম স্বপ্ন বা কল্পনা করে এবং মধ্য বয়সে সেই কল্পনাগুলোকে কতটুকু বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছে তা মূল্যায়ন করে। এই আত্মমূল্যায়নের ফলস্বরূপ Archer আরো ইঙ্গিত করেছেন যে, 'মধ্যবয়সে নিজের ভেতর বাস্তবিক ও স্বতন্ত্র একটি ধারণা তৈরী করতে হয়।' নিজের যোগ্যতা এবং সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে নিজের মধ্যে তৈরি হওয়া অবাস্তব ধারণাগুলো পরিশুদ্ধ করে পরিপক্ক ধারণা পোষণ করতে শিখে।
৮. দুইটি মানদণ্ডে মূল্যায়ন:
মধ্যবয়সের অষ্টম বৈশিষ্ট্যটি হলো এর দ্বিমুখী মূল্যায়ন করা হয়, মহিলাদের জন্য একটি আদর্শমান এবং পুরুষদের জন্য একটি আদর্শমান। বাড়িতে, ব্যবসায়, শিল্পক্ষেত্রে, পেশা এবং সামাজিক জীবনে পুরুষ এবং নারীদের সমান ভূমিকা ক্রমবর্ধমান হাওয়া স্বত্ত্বেও বার্ধক্য প্রক্রিয়ার ব্যাপারে এখনও দ্বিমুখী মূল্যায়ন বিরাজ করে। যেখানে এই দ্বিমুখী মূল্যায়ন মধ্যবয়সী পুরুষ এবং নারীদের জীবনের বহু দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে, দুটি বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে প্রচলিত।
মধ্যবয়সের এই বৈশিষ্ট্যের প্রথমটি শারীরিক পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত। যখন পুরুষের চুল সাদা হতে থাকে, চামড়া মুখে ভাজের দাগ জন্মায়, কোমরে, মেদ জমা হয় এবং সবাই তাদেরকে 'আলাদা' ভাবে দেখে। একই ধরনের পরিবর্তন নারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। নারীদেরকে এ বয়স থেকে অনাকর্ষনীয় হিসাবে ধরা হয়।
দুইটি মানদণ্ডে মূল্যায়নের আরেকটি ক্ষেত্র হলো মধ্যবয়সের ব্যক্তিদের কিভাবে জীবন যাপন করা উচিত তা নিয়ে দুইটি দর্শন আছে। একটা পক্ষ মনে করে এ বয়সে ব্যক্তিদের আরো কর্মচঞ্চল হওয়া উচিৎ। নানা সামাজিক ও পরিবারিক কাজে নিয়েজিত হওয়া উচিৎ। অন্য পক্ষ মনে করে মধ্যবয়সে ব্যক্তিদের এই বয়সকে স্বগতম জানিয়ে নেয়া উচিৎ- যেমন: পেশা, দায়িত্ব থেকে অবসর নেওয়া, জীবনকে চিন্তা ভাবনা থেকে মুক্ত রাখা ইত্যাদি। এই মতবাদকে "Rocking chair" দর্শন বলে পুরুষদের চেয়ে নারীরা এই দর্শন বেশী অনুসরণ করে।
৯. শূন্য নীড়ের কাল:
মধ্যবয়স এমন একটা সময় যখন সন্তানেরা পিতা-মাতার সাথে থাকতে চায় না। তারা গৃহ ত্যাগ করে। শুধু দেরীতে বিবাহ, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে এ দৃশ্য ভিন্ন হয়ে থাকে। বৈবাহিক জীবনের এ পর্যায়ে এসে গৃহশূণ্য অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়। অধিকাংশ আমেরিকান পরিবারে ৪০ বছর বয়স থেকে গৃহশূন্য হয়ে পড়ে (পিতা-মাতার) কিন্তু যেসব স্বামী স্ত্রী দেরীতে বিবাহ করেছে বা সন্তান ধারণ করেছে তাদের জন্য ৫০ বছর বয়সে "গৃহশূন্য" অবস্থা আসে। উল্লেখ্য, ছোট পরিবারে "গৃহশুন্য" অবস্থা আগে আসে।
পরিবারকেন্দ্রিক বাড়িতে বছরের পর বছর বাস করার পরে বেশির ভাগ প্রাপ্ত বয়স্কের জন্য যুগলকেন্দ্রিক বাড়িতে মানিয়ে নেয়াটা কঠিন হয়ে পড়ে। দেখুন ফিগার ১০-৪, এটার কারণ হল যে, বেড়ে ওঠার বছর গুলোতে স্বামী এবং স্ত্রী আলাদা থাকে এবং সেখানেই তাদের ব্যক্তিগত আগ্রহের বিকাশ ঘটে। ফলে তাদের যখন একসাথে থাকতে দেওয়া হয়, সন্তান লালনপালন ব্যাতীত তেমন কোনো পারস্পারিক আগ্রহই আর তাদের মাঝে থাকে না।
স্বাভাবিকভাবে নারীদের উপর "গৃহশূন্য" অবস্থার প্রভাব পুরুষদের চেয়ে বেশী পড়ে। যেসব নারীরা প্রাপ্তবয়স্ক থাকা অবস্থায় পরিবারে সব দেখাশোনা করেছেন তাদের কাছে এ অবস্থা একটা আঘাত হিসাবে আসে ঠিক যেমনটা আসে পুরুষদের পেশা থেকে অবসরের পর।
১০ একঘেয়েমী/একাকীত্বের সময়:
মধ্যবয়সে সবাই না হলেও অধিকাংশ নারী পুরুষ একঘেয়েমী বা একাকীত্ব অনুভব করে। ৪০ এর শেষের দিকে পুরুষেরা বেশীর ভাগ সময় বাসার কাজে ব্যস্ত থাকে পরিবারে সময় দে যা থেকে খুব কম আন্দ অনুভব করে এভং একঘেয়েমী ভাব আসে। নারীরা যারা প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় সন্তান, পরিবারে সময় দিয়েছিল। সন্তানদের অন্যত্র চলে যাওয়ার ফলে একাকীত্ব অনুভব করে এবং খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকে এটা ভেবে যে আগামী ২০-২৫ বছর কীভাবে পার করবে। অবিবাহিত মহিরা বা যারা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিল মধ্যবয়সে এসে পুরুষদের মতো একই কারণে একঘেয়েমীভাব অনুভব করে। Archer এর মতে পুরুষেরা যে রকম অনুভব করে তা হলোঃ "তারা জানে তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। এই অনুভূতি তাদেরকে একঘেয়েমী করে তোলে। অনেকে এক জায়গা থেকে অন্যত্র বসবাস করতে যায়। অনেকে মনে করে তারা নিজেদের লক্ষ্য পরিবর্তনের শেষ সুযোগ হারিয়ে ফেলেছেন। মধ্যবয়সের মতো কোন বয়সেই আনন্দের চেয়ে একঘেয়েমী বা একাকীত্বতার পরিমান বেশী না। একটা গবেষণায় জীবনের সুখকর এবং অস্বস্তিকর স্মৃতির কথা জানতে চাওয়া হয়েছিলো সেখানে বৃদ্ধরা তাদের ৪০-৪৯ বছর বয়সের স্মৃতিকে সবচেয়ে বেশী অস্বস্তিকর বলে চিহ্নিত করে এবং ৬০ এর পরের জীবনকে পুরোপুরি অস্বস্তিকর বলে চিহ্নিত করে।