মধ্যবয়সে শারীরিক পরিবর্তন ও উপযোজন

মধ্যবয়সি নারী-পুরুষকে সবচেয়ে কঠিন যে পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয় তা হলো শারীরিক পরিবর্তন। তাদেরকে বুঝতে হবে আগের মতো শরীরের সব কিছু চলবে না, অভ্যন্তরীন ও বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে বাধা আসবে। শারীরিক পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ, ব্যক্তির বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার শারীরিক পরিবর্তনের প্রতি একটি সামাজিক ও কৃষ্টিগত কারণে একটি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়। মধ্যবয়সের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের সাথে অভিযোজন আলোচনা করা হলো-

মধ্যবয়সে শারীরিক পরিবর্তন ও উপযোজন

মধ্যবয়সি নারী-পুরুষকে যেসব গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়, তা নিম্নে দেয়া হলো:

ক) চেহারা/অবয়বে পরিবর্তন:

বয়ঃসন্ধিকালে চেহারা, বাহ্যিক অবয়ব দিয়েই সামাজিক মর্যাদা, গ্রহণযোগ্যতা এবং নেতৃত্বের ক্ষমতা গড়ে উঠতো- তাই মধ্যবয়সে চেহারা পরিবর্তন একটা হুমকি স্বরূপ নেয়। পুরুষদের জন্য নিজেকে যুবক, বেশি বলবান ও বেশি শক্তিসম্পন্ন দেখানোর ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি হয়। বাহ্যিক অবয়বের মাধ্যমেই মানুষ তার চাকরি ধরে রাখার ক্ষমতা যাচাই করে ফেলে। তাই পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য এটা সার্বজনীন ভয়। মধ্যবয়সি চেহারা তাদের স্বামী/স্ত্রী বা বিপরীত লিঙ্গের কাউকে আকর্ষণ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেবে। 

সাধারণত নারীদের চেয়ে পুরুষদের চেহারা বা বাহ্যিক অবয়ব আগে পরিবর্তন হয়। এটা ব্যাখ্যা করা যায় এভাবে নারীরা তাদের আকর্ষণীয়তা নিয়ে অনেক সচেতন থাকে এবং মধ্যবয়সের পরিবর্তনকে তারা ঢেকে ফেলে। কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত নারী ও পুরুষদের বয়সের চিহ্ন দ্রুত আসে- যেমন আর্থ-সামাজিক অবস্থা যাদের ভালো সচ্ছল তাদের তুলনায় অসচ্ছল শ্রেণির নারী-পুরুষদের মধ্যে বয়সের ছাপ দ্রুত দেখা দেয়। এটা ব্যাখ্যা করা যায় এভাবে সচ্ছল শ্রেণির নারী-পুরুষেরা কম শ্রম, শক্তি ব্যয় করে, অসচ্ছল শ্রেণির নারী-পুরুষেরা তাদের জীরিকা নির্বাহের তাগিদে অধিক শ্রম ব্যয় করে। তাছাড়া উন্নতমানের খাদ্য, প্রসাধনী, পোশাক ইত্যাদির ফলে এই পার্থক্য দেখা যায়। মধ্যবয়সিদের যেসব বয়সের ছাপ দেখা দেয় তা হলো:

  1. ওজন বৃদ্ধি: মধ্যবয়সে দেহে প্রচুর মেদ জমা হয়।
  2. চুলের ধূসর রঙ ধারণ ও হ্রাস: মধ্যবয়সি পুরুষের চুলের লাইন সরে যেতে শুরু করে, চুল পাতলা হয়ে যায় এবং কপালে টাক পড়া খুবই সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। নাক, কান ও চোখের লোম মোটা হয়ে যায়। মুখের দাঁড়ি আস্তে আস্তে বাড়ে এবং কম উজ্জ্বল দেখায়। মহিলাদের চুল পাতলা হয়ে যায়, ঠোঁটের উপরে ও থুতনিতে লোম গজায়। মহিলা এবং পুরুষ উভয়েরই পঞ্চাশের দিকে এসে চুল ধূসর হয়ে যায় এবং কারো কারো মধ্যবয়স শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই চুল সাদা হয়ে যায়।
  3. ত্বকের পরিবর্তন: মুখ, ঘাড়, বাহু ও হাতের চামড়া মোটা ও কুঁচকে যায়। চোখের নিচে কালি পড়ে, বলিরেখাগুলো আরও দীর্ঘস্থায়ীরূপে দেখা যায়। হাঁটুতে ও হাঁটুর মাঝের চারপাশে নীলচে লাল বর্ণহীনতা দেখা যায়।
  4. শরীর কুঁজো হয়ে যাওয়া: কাঁধ গোলাকার হয়ে যায় এবং শরীর নিচের দিকে নেমে আসে। পেট সামনে বেরিয়ে আসে এবং ব্যক্তিকে খর্বকায় লাগে।
  5. পেশির পরিবর্তন: বেশির ভাগ মধ্যবয়সি লোকের পেশি থুতনি বাহুর উপরিভাগ ও পেটের অংশ নরম ও তুলতুলে হয়।
  6. গ্রন্থি সমস্যা: কিছু মধ্যবয়সি লোকের তাদের গ্রন্থিতে ও বিভিন্ন অঙ্গতে সমস্যা শুরু হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের হাঁটতে কষ্ট হয় এবং জবুথবুভাবে কোনো কিছু ধরে যা তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে কদাচিৎ পাওয়া যায়।
  7. দাঁতের পরিবর্তন: দাঁত হলুদাভ হয়ে যায় এবং নতুন দাঁতের পাটি লাগাতে হয়।
  8. চোখের পরিবর্তন: চোখকে ব্যক্তির যৌবন বয়সের চেয়ে কম উজ্জ্বল দেখায় এবং চোখের কোণে কেঁতুর জমে।

খ) শরীরবৃত্তয় কার্যাবলির পরিবর্তন: 

শরীরের বহিরাবরণের পরিবর্তন শরীরের ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই পরিবর্তন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাদের কোষের পরিবর্তনের ফলে হয়ে থাকে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে কোষগুলো পুরানো রবারের মতো ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। এই অবস্থা মধ্যবয়স থেকে শুরু হয় এবং ক্রমান্বয়ে অবনতি হয়। এর ফলে রক্তপ্রবাহের কঠিনতা বৃদ্ধি পায়। যাদের শরীরের মেদ, ওজন বেশি তাদের রক্তচাপ দেখা দেয় এবং এর ফলে শ্বাস প্রশ্বাসের জটিলতা বৃদ্ধি পায়। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরে সব ধরনের অঙ্গ- প্রত্যঙ্গের কার্যক্রমে শিথিলতা আসে। আমাদের ত্বকের লোমকূপ গুলোর ছিদ্র বন্ধ হয়ে আসে, ফলে শরীরের দুর্গন্ধ বৃদ্ধি পায়। 

উপসংহার 

আলোচনা পরিশেষে বলা যায় যে, পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্রমেও স্থবিরতা আসে, ফলে নানারকমের খাদ্য হজম প্রক্রিয়া হ্রাস পায় এবং পরিপাকতন্ত্রের রোগ-ব্যাধি বৃদ্ধি পায়। এর সাথে সাথে মধ্যবয়স্কে দাঁতের সমস্যা ও বৃদ্ধি পায়, ফলে অনেকে খাবার খাওয়া, চর্বণে জটিলতা আসে। ফলে অনেক খাবার খেতে পারে না এবং পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা দেখা দেয়। কোষ্ঠকাঠিন্য এ বয়সের রোগগুলোর মধ্যে খুবই সাধারণ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url