বার্ধক্য দৃষ্টিগত ও শ্রবণগত সংবেদন ক্ষমতার পরিবর্তন ও উপযোজন
সংবেদন কার্যপ্রক্রিয়ায় পরিবর্তন বয়সের সাথে বৃদ্ধি পায়। তবে এই পরিবর্তন ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। কিছু বৃদ্ধ ব্যক্তির ক্ষেত্রে এ কার্যপ্রক্রিয়া দ্রুত হ্রাস পায়, আবার অনেকের এ ক্ষমতা বাহ্যিকভাবে অপরিবর্তনীয় দেখা যায়। ৮০ বছর বয়স্ক একজন ব্যক্তি হয়তো ফিসফিস শব্দেও কথোপকথনের প্রতিটি শব্দ শুনতে পায়; অন্যদিকে কেউ হয়তো দরজার বেলও শুনতে পায় না। ৭০ বছর বয়স্ক একজন বৃদ্ধ মহিলা হয়তো দিনে ৫ মাইল দৌড়ায়, অন্যদিকে একই বছর বয়সি একজন বৃদ্ধ হয়তো রাস্তায় হাঁটতেই হিমশিম খেয়ে যান। বেশি বয়স্ক বৃদ্ধদের অক্ষমতার হার অধিক থাকে। দৃষ্টি ও শ্রবণ শক্তির সমস্যার কারণে তারা সামাজিক যোগাযোগ ও সম্পর্ক বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়। পেশিগত অক্ষমতার ফলে দৈনন্দিন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়।
বার্ধক্য দৃষ্টিগত ও শ্রবণগত সংবেদন ক্ষমতার পরিবর্তন
শারীরবৃত্তিক বিভিন্ন পরিবর্তনের ফলে বৃদ্ধ ব্যক্তির দৃষ্টিগত ও শ্রবণগত সংবেদনের বেশ কিছু তারতম্য দেখা যায়। নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো:
১. দৃষ্টিশক্তি:
আমেরিকায় প্রায় ১৮% বৃদ্ধব্যক্তি দৃষ্টি শক্তিজনিত অসুবিধায় ভোগেন। গভীরতা, বর্ণ সংক্রান্ত জটিলতা কিংবা দৈনন্দিন কার্যক্রম যেমন পড়া, পেনাই করা, বাজার করা, রান্না করা ইত্যাদি বিভিন্ন অবস্থায় দৃষ্টিশক্তিতে অসুবিধা দেখা দিতে পারে। দৃষ্টি সংবেদনশীলতায় ক্ষতির ফলে খুব ছোট অথবা হালকা প্রিন্টের শব্দ পড়তে সমস্যা দেখা যায়। দৃষ্টিশক্তির সমস্যার কারণে বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অনেকেই দৃষ্টিশক্তির অক্ষমতার কারণে গোসল, পোশাক পরিধান এবং ঘরে হাঁটা-চলার ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হন।
কোনো কিছু দেখার জন্য বৃদ্ধ চোখে অধিক আলোর প্রয়োজন হয়। সাধারণত উজ্জ্বলতার প্রতি এরা অধিক সংবেদনশীল হয়। কম আলোতে যে কোনো কিছু দেখতে ও পড়তে অসুবিধার সম্মুখীন হয়। তাই গাড়ি চালানো এদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে, বিশেষ করে রাতে (D.W. Kline et al, 1992; D.W. Idine & Scialfa, 1996)। Sonoma ক্যালিফোর্নিয়াতে ৫৫ এবং তদোর্ধ্ব বছর বয়সি ২০৮৫ জন নারী-পুরুষকে নিয়ে করা গবেষণায় দেখা যায় প্রায় ৪৭% ব্যক্তি গাড়ি চালানো এড়িয়ে চলেন। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল দৃষ্টিশক্তির অসুবিধা।
স্বাভাবিক হারে দৃষ্টিশক্তির সমস্যা দেখা দিলে তা লেন্সের পরিবর্তন, অস্ত্রোপচার কিংবা অন্যান্য চিকিৎসার মাধ্যমে দূর করা যায়। তথাপি ৭০ বা তদোর্ধ্ব বয়সি ব্যক্তিদের প্রতি ৫ জনের একজনের দৃষ্টিশক্তি এমন মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় যা ঠিক করা যায় না (Desai et al, 2001)।
বেশির ভাগ দৃষ্টিশক্তিজনিত অক্ষমতার কারণ হলো ছানি, বয়সজনিত জটিলতা যা বয়সের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। ৬০ বছরের অধিক বয়সি ব্যক্তিদের প্রায় অর্ধেকের বেশি ছানিজনিত সমস্যায় ভোগেন। Cataract বা ছানি বলতে চোখের লেন্সের মেঘাচ্ছন্ন বা ঝাপসা অংশকে বোঝায়, যা ঝাপসা দৃষ্টিশক্তির সৃষ্টি করে (Schaumberg et al, 2004)। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ছানির অপসারণ সাধারণত সফল হয় এবং বৃদ্ধ আমেরিকানদের মধ্যে অন্যতম সাধারণ অস্ত্রোপচার। বয়সজনিত Macular degeneration কারণে রেটিনার কেন্দ্র কোনো জিনিসের বিস্তারিত পার্থক্য করার ক্ষমতা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায় এবং বৃদ্ধদের দৃষ্টিজনিত অক্ষমতার এটিই প্রধান কারণ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লেজার অস্ত্রোপচার, Photodynamic therapy এবং antioxidant and zinc supplement দৃষ্টিশক্তির অতিরিক্ত ক্ষতি প্রতিরোধে সহায়তা করে (Foundation Fighting Blindness, 2005)।
Glaucoma, Optic nerve-এর একটি অপূরণীয় ক্ষতি যা চোখের অতিরিক্ত চাপ দেবার ফলে ঘটে থাকে। চিকিৎসা না করা হলে এটি অন্ধত্বের দিকেও যেতে পারে। ১৯৯৫ সালে বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর ৮% glaucoma আছে বলে প্রতিবেদনে প্রকাশ করে। তবে ধারণা করা হয় আরো অনেকে glaucoma-তে আক্রান্ত এবং এ সম্পর্কে অসচেতন।
২. শ্রবণশক্তি:
আমেরিকার প্রায় ৪৭% বৃদ্ধ পুরুষ এবং ৩০% বৃদ্ধ নারী শ্রবণশক্তিতে সমস্যার কথা প্রকাশ করেছেন। শ্রবণশক্তিতে অক্ষমতা বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বৃদ্ধি পায়, যা ৮৫ এবং তদোর্ধ্ব বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রায় ৬০%-কে প্রভাবিত করে (Federal Interagency Forum on Aging-Related Statistics, 2004)। ৮৫ এবং তদোর্ধ্ব ব্যক্তিদের প্রায় ১৭% সম্পূর্ণ বধির (Desai et al, 2001)। শ্রবণশক্তি হ্রাস পাবার ফলে বৃদ্ধ ব্যক্তিদের সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির সৃষ্টি হয়। তাদেরকে অন্যমনস্ক, বিরক্তিকর এবং বিভিন্ন নেতিবাচক ধারণা দ্বারা প্রভাবিত করা হয়। শুধু বৃদ্ধ ব্যক্তিই এ অবস্থার শিকার হন না, বরং অনেকাংশে তাদের সঙ্গী বা সঙ্গিনীও এ নেতিবাচক ধারণা দ্বারা আক্রান্ত হন। শ্রবণশক্তির হ্রাসের ফলে অনেক সময় অন্যেরা কী বলেছিল তা মনে করতেও বৃদ্ধরা অসুবিধার সম্মুখীন হন (Wingfield, Tun & McCoy, 2005)।
শ্রবণশক্তি হ্রাসের কারণ
বিভিন্ন কারণে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়:
প্রথমত, যদিও শ্রবণশক্তিজনিত অসুবিধা সাধারণত বাহ্যিক কারণে ঘটে থাকে। যেমন, অতিমাত্রায় কানের খইল জমা হয় কিংবা কানের মধ্য ভাগের হাড়ে বাত রোগ।
দ্বিতীয়ত, তবে বেশির ভাগ ক্ষতি Cochlea-র ক্ষয়জনিত পরিবর্তনের ফলে ঘটে থাকে যা শ্রবণের প্রাথমিক উপাদান। Cochlea শ্রবণশক্তির প্রাথমিক উপাদান।
তৃতীয়ত, উচ্চ কম্পাঙ্কজনিত শব্দের ক্ষেত্রে শ্রবণশক্তি হ্রাস সাধারণত বৃহত্তর মাত্রায় দেখা যায় (Corso, 1977)। একজন বৃদ্ধ ব্যক্তির পুরুষের কথার তুলনায় নারীদের কথা শুনতে বেশি অসুবিধা হয়ে থাকে। বৃদ্ধরা উচ্চ কম্পাঙ্ক বিশিষ্ট শব্দ কম শুনে থাকেন এবং তাদের বয়স বৃদ্ধির সাথে ক্ষতির মাত্রাটা বেশি হয়।
চতুর্থত, শ্রবণশক্তির স্পষ্টতা এবং বোঝার ক্ষমতার যে হ্রাসপ্রাপ্তি ঘটে থাকে তা শুধু সংবেদনশীলতার ক্ষতির কারণে না-ও ঘটতে পারে। এ সময় ব্যক্তির সামাজিক বিচ্ছেদ ঘটে থাকে, ব্যক্তি নিজেকে সামাজিক পরিবেশ থেকে গুটিয়ে নেন। তাই, তার জীবনের পরিচিত শব্দগুলো তার নিকট ক্রমেই মৃদু হয়ে আসতে থাকে। ফলে বিষণ্ণতা এবং অন্যান্য আবেগীয় অসুবিধা খুব সাধারণভাবেই ব্যক্তির জীবনে প্রকট হয়ে ওঠে (Knapp, 1948)।
শ্রবণশক্তি সহায়ক যন্ত্র সহায়তা করলেও এর সাথে উপযোজনয় ঘটানো বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। বৃদ্ধ নারীদের ১০% এবং বন্ধ পুরুষদের ১৯% শ্রবণশক্তি সহায়ক যন্ত্র পরিধান করেছেন বলে প্রতিবেদনে প্রকাশ করেন (Federal Interagency Forum on Aging-Related Statistics, 2004)। শ্রবণশক্তি সহায়ক অন্যান্য যন্ত্রের মধ্যে রয়েছে টেলিফোন এমপ্লিফায়ার।