কৃত্যমুখী প্রতিক্রিয়া

পীড়নের সম্মুখিন হলে মানুষের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়াগুলোর উৎপত্তি হয়, সেগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-১. কৃত্যমুখী প্রতিক্রিয়া বা প্রত্যক্ষ প্রতিক্রিয়া এবং ২. প্রতিরক্ষামুখী প্রতিক্রিয়া বা পরোক্ষ প্রতিক্রিয়া।

কৃত্যমুখী প্রতিক্রিয়া (Task Oriented reaction): 

সমস্যামূলক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে পীড়ন দূর করার যে বাস্তবমুখী প্রচেষ্টা করা হয় তাকে কৃত্যমুখী প্রতিক্রিয়া বলে। উপযোগী প্রতিক্রিয়া তিন ধরনের হয়ে থাকে; যেমন- সরাসরি প্রতিক্রিয়া, পশ্চাদপসরণ ও সমঝোতা। এগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. সরাসরি প্রতিক্রিয়া (Direct Reaction): 

পীড়ন মোকাবেলায় সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি হলো সরাসারি প্রতিক্রিয়া। সরাসরি প্রতিক্রিয়ায় সক্রিয় কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে পীড়নমূলক পরিস্থিতি নির্মূল করা হয়। পরিস্থিতি পুনর্মূল্যায়নের জন্য নিখুঁত পর্যবেক্ষণ করে প্রকৃত সমস্যা চিহ্নিত করা; সমস্যা সমাধানের জন্য নিজের মধ্যে উপায় হলো- প্রয়োজনীয় দক্ষতার উন্নয়ন সাধন করা এবং পরিশেষে নব উদ্যমে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা; যেমন-কোনো ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করে পীড়নমূলক পরিস্থিতির সম্মুখীন হলো। সেক্ষেত্রে সে পরিস্থিতি যথাযথভাবে পুনর্বিবেচনা করে বুঝতে পারল যে অপর্যাপ্ত প্রস্তুতিই তার ব্যর্থতার কারণ। সুতরাং সে নব উদ্যমে পরবর্তী ভর্তি পরীক্ষার জন্য পূর্ণ মাত্রায় প্রস্তুতি নিতে শুরু করবে এবং পরবর্তী ভর্তি পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করে পীড়নের পরিসমাপ্তি ঘটাবে।

২. পশ্চাদপসরণ: 

সরাসরি প্রতিক্রিয়া দ্বারা পীড়ন সৃষ্টিকারী অবস্থাকে দূরীভূত করা না গেলে নিজেকে তা থেকে সরিয়ে নেয়া অথবা লক্ষ্যবস্তুকে বর্জন করাই ভালো পন্থা; অর্থাৎ, যে সমস্যাজনক পরিস্থিতি ব্যক্তির মধ্যে পীড়নের সৃষ্টি করছে; তা যদি সমাধান করা সম্ভব না হয়, তবে নিজেকে সে ঐ পরিস্থিতি থেকে সরিয়ে নিতে পারে। যেমন- বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেল করা শিক্ষার্থী যদি মনে করে যে, পরীক্ষায় পাস করার মতো ক্ষমতা তার নেই, তাহলে তার উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি বাদ দিয়ে বিকল্প লক্ষ্য নির্ধারণ করা।

৩. সমঝোতা বা আপোশ: 

এক্ষেত্রে ব্যক্তি সমস্যাজনক পরিস্থিতির কিছু পরিবর্তন করে ও নিজের চাহিদার কিছু পরিবর্তন করে পরস্পরের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। এক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বীয় দক্ষতা ও যোগ্যতা এবং বিরাজমান পরিস্থিতিকে বাস্তব দৃষ্টিতে যাচাই করেই এই সমঝোতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যে ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে বারবার অকৃতকার্য হচ্ছে তার উচিত অন্য কোনো সহজ বিষয়ে পড়াশোনা করা।

উপসংহার: 

উপর্যুক্ত তিনটি পদ্ধতিতে ব্যক্তিকে বাস্তবতার নিরিখে বিভিন্ন সমাধানমূলক কার্যসম্পাদনের মাধ্যমে পীড়ন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয় বলে এগুলোকে কৃত্যমুখী প্রতিক্রিয়া বলে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url