প্রতিরক্ষামূলক কৌশল
ফ্রয়েডের মনঃসমীক্ষণ-তত্ত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হলো ব্যক্তিত্বের প্রতিরক্ষা-কৌশল যা বিনা সমালোচনায় সকলের দ্বারা সাদরে গৃহীত হয়। নিম্নে প্রতিরক্ষা-কৌশল কী তা বর্ণনা করা হলো-
প্রতিরক্ষামূলক কৌশল:
ব্যক্তির উদ্বেগের প্রেক্ষিতে সৃষ্ট চাপ দূর করে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার জন্য Ego কতকগুলো চরম পন্থার আশ্রয় নেয়। এই চরম পন্থার সাহায্যে অহম বাস্তবতাকে কিছুটা বিকৃত করে উদ্বেগের কবল থেকে নিজেকে রক্ষা করে। শুধু উদ্বেগ নিরসন করার জন্যই এগুলো ব্যবহৃত হয় না। বরং যে কোনো প্রকার মানসিক উত্তেজনা ও অশান্তি দূর করার জন্য ও নিজের আত্মমর্যাদাবোধকে অক্ষুণ্ণ রাখার জন্যও মানুষ প্রায়ই এই কৌশলগুলোর আশ্রয় গ্রহণ করে। বাস্তবতাকে কিছুটা বিকৃত করে ব্যক্তি স্বীয় ব্যর্থতা ও অক্ষমতাকে ঢেকে রাখে এবং নিজের অহংবোধকে অক্ষুণ্ণ রেখে কিছুটা সান্ত্বনা বা প্রবোধ লাভ করে। ফ্রয়েড এগুলোকে আত্মরক্ষা-কৌশল (ego-defense mechanisms) বা প্রতিরক্ষা-কৌশল (defense mechanisms) নামে আখ্যায়িত করেছেন। তবে এগুলো বর্তমানে অধিক পরিচিত। ফ্রয়েডই প্রথম এই কৌশলগুলো সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেছেন এবং তাঁর এই ধারণাকে সব মনোবিজ্ঞানীই একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রূপে স্বীকার করেছেন। ফ্রয়েড এ ধরনের অনেকগুলো প্রতিরক্ষা- কৌশলের কথা উল্লেখ করেছেন; যথা-
১. যুক্তাভ্যাস, ২. প্রক্ষেপন, ৩. স্থানচ্যুতি, ৪. উদগতি, ৫. কল্পনাবিলাস, ৪. অবদমন, ৭. ক্ষতিপূরণ, ৮. বিপরীত প্রতিক্রিয়া গঠন, ৯. একাত্মতা অনুভব এবং ১০. প্রত্যাবৃত্তি। পরবর্তীকালে আরও কিছু নতুন নতুন প্রতিরক্ষা-কৌশল উদ্ঘাটিত হয়েছে; যেমন- ১১. অনীহা ১২. উদাসীনতা ১৩. নিষ্ক্রিয়তা ১৪. দিবাস্বপ্ন ১৫. সংরক্ষণ ইত্যাদি।
উপসংহার:
সুতরাং পীড়নের ফলে ব্যক্তির মধ্যে উদ্বেগ ও চাপের সৃষ্টি হয়। ব্যক্তি তখন বাস্তবকে বিকৃত করে কতকগুলি পরোক্ষ প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে নিজের অহংবোধকে অক্ষুণ্ণ রাখতে চায় এবং উদ্বেগ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চায়। ব্যক্তি এগুলি তার অজান্তেই করে থাকে।