ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে পার্থক্য
ভয় ও আতঙ্ক অস্বভাবী মনোবিজ্ঞানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়। এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য ও সম্পর্ক উভয়ই রয়েছে। এক ধরনের আচরণমূলক গোলযোগের সাথে ভয় ও আতঙ্কের সম্পৃক্ততা বর্তমান। এক্ষেত্রে একটি বিশেষ বিষয় বা বস্তুর প্রতি ব্যক্তির এক বদ্ধমূল ভয়জনক ধারণা থাকে যার কোনো বাস্তব কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। এ ভয়জনক ধারণার প্রেক্ষিতে ব্যক্তির মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় তাই আতঙ্ক।
ভয়:
ভয় বলতে ভীতিমূলক অবস্থাকে বোঝায়। এটি এমন একটি অবস্থা যা ব্যক্তির চেতনা বা অবচেতন মনে ভীতির সৃষ্টি করে। ভয়জনিত অবস্থায় ব্যক্তি মনে মনে অনকাঙ্ক্ষিত শিহরণ অনুভব করে এবং কোনো কিছু থেকে নিজেকে বিরত রাখে। ভয় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। পরিবেশের যেকোনো কল্পিত দিককে কেন্দ্র করে ব্যক্তির মনে ভয় বা ফোবিয়া দেখা দিতে পারে, এজন্য নানা প্রকার ভয়ের সন্ধান পাওয়া যায়; যেমন- উচ্চস্থানের ভয়, খোলা জায়গার ভয়, বন্ধ জায়গার ভয়, রক্তের ভয়, নির্জন স্থানের ভয়, অন্ধকারের ভয়, ভিড়ের ভয়, জীবন্ত কবরস্থ হওয়ার ভয়, জলাতঙ্কের ভয়, সবার মাঝে কথা বলার ভয়, রোগাক্রান্তের ভয়, আগুনের ভয়, মৃত্যুভয় ও প্রাণীভয়। সাধারণভাবে এ ভয়গুলো অল্পমাত্রায় অনেক স্বাভাবিক মানুষের মধ্যেই থাকে। কিন্তু যখন এ ভয়গুলো ব্যক্তির পক্ষে সম্পূর্ণ অদম্য হয়ে ওঠে তখনই এগুলো মনোব্যাধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আতঙ্ক:
গ্রিক শব্দ 'Phobos' থেকে ইংরেজি 'Phobic' শব্দের উৎপত্তি হয়েছে, যার অর্থ আতঙ্ক। আতঙ্ক বলতে এক ধরনের আচরণমূলক গোলযোগকে বোঝায়। অন্যভাবে বলা যায়, যে ভীতি মানুষের চেতন বা অবচেতন মনে তীব্র মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তার সৃষ্টি করে তাই আতঙ্ক। এটি এক ধরনের স্নায়বিক রোগ।
ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে পার্থক্য:
ভয় ও আতঙ্ক দুটি মানসিক অবস্থার নাম। ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে যথেষ্ট মিল থাকলেও এদের কিছু পার্থক্যও রয়েছে। নিম্নে ভয় ও আতঙ্কের মধ্যকার পার্থক্য আলোচনা করা হলো:
১. ভয় হলো সাধারণ অনুভূতি, যেটা সবারই হয়। যেমন, বাঘ দেখলে ভয় পায়, ভূমিকম্প হলে ভয় পায়- এটা স্বাভাবিক।
কিন্তু ফোবিয়া/আতঙ্ক/অহেতুক ভয় হলো বিশেষ ধরণের ভয়, বিশেষ কিছুর ওপর ভয়। এই যেমন, তেলাপোকা মা মাকড়শা দেখলে সবাই ভয় পাবে না, কিন্তু কেউ কেউ আতঙ্কে শিউরে উঠবে। এটাই ফোবিয়া।
২. ধারণাগত পার্থক্য: কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা যেকোনো বিষয় সম্পর্কে ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক বা যেকোনো ধরনের ক্ষতির আশঙ্কাই হচ্ছে ভয়। আর এ ভয়ের কারণে ব্যক্তির মধ্যে যে অবস্থা বা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় তাই আতঙ্ক।
৩. লক্ষণ বা অবস্থাগত পার্থক্য: যে বস্তু বা ঘটনাকে ব্যক্তি ভয় পায় তার নাম শোনার সাথে সাথে সে শিউরে ওঠে, কাঁপতে থাকে এবং তার কাছে যেতে চায় না। পক্ষান্তরে, আতঙ্ক অবস্থায় ব্যক্তির হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন বেড়ে যায়। শ্বাসকষ্ট হয়, বমি বমি ভাব হয়, দম বন্ধ হয়ে আসে ইত্যাদি অবস্থার সৃষ্টি হয়।
৪. শ্রেণিগত পার্থক্য: DSM-iv মোতাবেক বিশেষ জিনিসের প্রতি ভয়কে চার ভাগে ভাগ করা হয়; যথা: ক. রক্ত ও ইনজেকশনের ভয়, খ. বিভিন্ন পরিস্থিতি বা অবস্থার প্রতি ভয়, গ. বিভিন্ন জীবজন্তুর ভয় ও ঘ. প্রাকৃতিক পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের ভয়। পক্ষান্তরে, আতঙ্কের শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছে OSM-iv অনুসারে। OSM-iv অনুসারে আতঙ্ককে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে; যথা: ক. জনতার ভীতি থেকে আতঙ্ক ও খ. জনতার ভীতি ব্যতীত আতঙ্ক।
উপসংহার:
পরিশেষে বলা যায় যে, ভয় ও আতঙ্ক দুটি সমার্থক শব্দ হলেও মনোবিজ্ঞানে বিশেষত অস্বভাবী মনোবিজ্ঞানে এগুলো ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। ভয় ও আতঙ্ক উভয়ই অস্বাভাবিক অবস্থা। শিশু বা যেকোনো বয়সের লোকদের স্নায়বিক দুর্বলতার জন্য এ অবস্থাকে দায়ী করা হয়।