শিশু ও বিকাশ মনোবিজ্ঞান

শিশু ও বিকাশ মনোবিজ্ঞান (Psychology of Childhood and Development) 

শিশু ও বিকাশ মনোবিজ্ঞান প্রধানত মানুষের বর্ধন ও বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করে। মাতৃগর্ভে ভ্রূণের জন্ম মুহূর্তে থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত মানব জীবনের বিভিন্ন স্তরে যেসব শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে তার আলোচনাই এ শাখার বিষয়বস্তু। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের ফলে শিশুর আচরণের যে পরিবর্তন ঘটে শৈশবে তা বেশ দ্রুত হয়। তাই মনোবিজ্ঞানীরা এ সময়ের বর্ধন ও বিকাশের আলোচনাকে শিশু মনোবিজ্ঞান নামে অভিহিত করেছেন। বয়সের কোন স্তরে কি ধরনের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন সূচিত হয় এবং এর ফলে আচরণের ক্ষেত্রে কি পরিবর্তন ঘটে তা জানতে পারলে শিশুকে যথাযথ নির্দেশনা দেয়া যায় এবং তার পরিবর্তী আচরণ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণীও করা যায়। তাছাড়া শিশুর আচরণের মধ্যে কোন অস্বাভাবিকতা আছে কি-না এবং থাকলেও তার কারণ নির্ধারণ করা যায়। এসব অস্বভাবী আচরণ কিভাবে দূর করা যায় বিকাশ মনোবিজ্ঞানীরা সে সম্পর্কেও পথ-নির্দেশ করেন। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের অস্বভাবী আচরণ দূরীকরণে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীরা যেসব চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করেন শিশুর অস্বভাবী আচরণ দূরীকরণের চিকিৎসা পদ্ধতি সেগুলি থেকে আলাদা।

শিশু মনোবিজ্ঞানের জ্ঞানকে শিশুর সুষ্ঠু ব্যক্তিত্ব বিকাশের উদ্দেশ্যে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয়। শিশুর মানসিক সুস্থতা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য পরিবার ও তার বাইরের পরিবেশ কিরূপ হওয়া বাঞ্ছনীয়, কোন বয়সে তার শিক্ষা পদ্ধতি কিরূপ হওয়া দরকার, কিভাবে তার সমস্যার সমাধান হতে পারে ইত্যাদি সবই শিশু মনোবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়বস্তু। এককথায় মনোবিজ্ঞানীরা শিশুর শারীরিক, মানসিক, আবেগিক, সামাজিক, নৈতিক বিকাশের ধারা সম্পর্কে গবেষণা করে নতুন তথ্য পরিবেশন করেন।

শৈশবের পরেও মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের বিভিন্ন স্তরে যেমন কৈশোর, প্রাপ্ত বয়স, মধ্যবয়স ও বৃদ্ধ বয়স ইত্যাদি স্তরে যেসব শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে সেগুলিও বিকাশ মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্ত। বিকাশ মনোবিজ্ঞানের মৌলিক গবেষণার মাধ্যমে তথ্য খুঁজে বের করে তা বাস্তবে প্রয়োগ করা হয় যাতে শিশুর ভবিষ্যৎ আচরণ ও কর্মপন্থা নির্ধারণের নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url