সাংগঠনিক আচরণ

সাংগঠনিক আচরণ (Organizational Behaviour)

বিভিন্ন কলকারখানা, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতে বিভিন্ন স্তরের লোক কাজ করে। স্তরভেদে এদের বিভিন্ন সংগঠন আছে। একই সংগঠনের মধ্যে ব্যক্তি বা দল কিভাবে কাজ করে কিভাবে পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলে এগুলির আলোচনাই হল সাংগঠনিক আচরণ। এটা মনোবিজ্ঞানের একটি কলিত শাখা।

বর্তমানে ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে এর মধ্যে অনেক নতুন তথ্যগত ধারণা (concept) অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। তাই সাংগঠনিক আচরণ সম্পর্কে সংগঠনের একজন ব্যবস্থাপককে বিভিন্নভাবে সাহায্য করছে। যেমন সংগঠনের বিভিন্ন ব্যক্তিগত আচরণ যথাযথভাবে প্রত্যক্ষণে ব্যবস্থাপককে সাহায্য করছে। সংগঠনে কর্মরত দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে মিথষ্ক্রিয়া এবং আন্তর্ব্যক্তি সম্পর্কের জটিলতা অনুধাবনে ব্যবস্থাপককে সাহায্য করছে। সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত ছোট ছোট দলের মধ্যে জটিল আন্তঃসম্পর্কের গতিশীলতা মূল্যায়নে সাহায্য করছে। সর্বোপরি সংগঠন একটি সামগ্রিক ব্যবস্থা বিশেষ। এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে যে আন্তঃসম্পর্ক বিদ্যমান সে সম্পর্কেও ব্যবস্থাপক মূল্যবান তথ্য পাচ্ছেন। এসব জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে একজন ব্যবস্থাপক সংগঠনকে একটি গতিশীল, উৎপাদনমুখী, লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সক্ষম হন।

অন্যান্য বিজ্ঞানের ন্যায় সাংগঠনিক আচরণের চারটি লক্ষ্য আছে। প্রথমত, বিভিন্ন পরিবেশগত অবস্থার মধ্যে মানুষ কিভাবে কাজ করে তার একটি সুসংবদ্ধ তথা ধারাবাহিক বর্ণনা দেয়া। এ লক্ষ্য অর্জনে ব্যবস্থাপক কর্মপরিবেশে মানুষের আচরণ সম্পর্কে যোগাযোগ রক্ষায় একটা সাধারণ ভাষা ব্যবহার করে থাকেন যার অর্থ সকলের কাছেই সমান। দ্বিতীয়ত, মানুষ কর্মপরিবেশে যে আচরণ করে তা বুঝতে পারা। কর্মচারীদের কোন অবাঞ্ছিত আচরণের প্রকৃত কারণ না বুঝে তাদের সমালোচনা করলে ব্যবস্থাপক হতাশ হবেন। এজন্য তাদের সব ধরনের আচরণের প্রকৃত উদ্দেশ্য খুঁজে দেখতে হয়।

তৃতীয়ত, ভবিষ্যতের কোন্ বিশেষ দিকে কোন্ কোন্ কর্মচারীর আচরণ সংগঠনের জন্য নিবেদিত এবং উৎপাদনমুখী হবে আর কারা অনুপস্থিত থাকতে পারে অথবা বেয়াড়া আচরণ করতে পারে কিংবা বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে পারে এ সম্পর্কে ব্যবস্থাপক আগেই উপলব্ধি করবেন এবং তা প্রতিরোধের প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেবেন। চতুর্থত, সংগঠনের স্বার্থে আংশিকভাবে হলেও কর্মচারীদের মধ্যে কিছু কিছু আচরণের বিকাশ ঘটাতে হয়। যেমন কর্মসম্পাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি, দক্ষতার বিকাশ, যৌথ প্রচেষ্টা, উৎপাদন বৃদ্ধি ইত্যাদি। এসব ব্যাপারে মূলত ব্যবস্থাপকই দায়ী থাকেন এবং তাঁকেই কর্মচারীদের ওপর প্রভাব খাটিয়ে তাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

জনগোষ্ঠী, সংগঠন কাঠামো, প্রযুক্তি এবং পরিবেশ-এ চারটি শক্তি সংগঠনের প্রকৃতিতে প্রভাব বিস্তার করে। একটা উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করতে গেলে বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীদের মধ্যে সুসম্পর্ক এবং কিছু প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে। এক্ষেত্রে প্রথম তিনটি শক্তি পরিবেশের ওপর যেমন প্রভাব ফেলে তেমনি পরিবেশও এদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।

সাংগঠনিক আচরণের আবার চারটি মাত্রাও (dimension) আছে। এগুলি হল সংগঠনের নীল নকশা (Organization design), আচরণ প্রক্রিয়া, পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ। উপরোক্ত চারটি শক্তি এবং সংগঠনের এ চারটি মাত্রার সুষ্ঠু সমন্বয়ের ওপর নির্ভর করে সংগঠনের সুষ্ঠু পরিচালনা। আর এ সবের মূল চাবিকাঠি হল মানব আচরণ। আর আচরণ সম্পর্কে সকল বৈজ্ঞানিক জ্ঞান সরবরাহ করে মনোবিজ্ঞান। তাই মনোবিজ্ঞানের একটি ফলিত শাখা হিসেবেই সাংগঠনিক আচরণ পেশাগত মর্যাদায় উন্নীত জ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র উদীয়মান শাখা হিসেবে স্বীকৃত।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url