পরিবেশ মনোবিজ্ঞান
পরিবেশ মনোবিজ্ঞান (Environmental Psychology)
সম্প্রতি পরিবেশ মনোবিজ্ঞান নামে মনোবিজ্ঞানের আরও একটি শাখার উদ্ভব ঘটেছে। এর অনুসন্ধান ক্ষেত্র জ্ঞানের অন্যান্য শাখার আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে নিহিত।
জীববিদ, ভূ-তত্ত্ববিদ, মনোবিজ্ঞানী, আইনবিদ, দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, পদার্থবিজ্ঞানী, রসায়নবিদ, ঐতিহাসিক এবং এদের উপশাখাসমূহ এবং প্রকৌশলীরাও মানুষ ও তার পরিবেশের মধ্যকার স্পর্শকাতর ও জটিল সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন।
বর্তমানে অধিকাংশ বিজ্ঞানী সমাজের বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি প্রতিক্রিয়া করতে গিয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানের সাথে জড়িত হয়ে পড়ছেন। তবে এ ব্যাপারে তারা জ্ঞানের বাস্তব তাৎপর্য এবং পরিবেশ ও মনুষ্য আচরণের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাঁরা লক্ষ করেছেন যে জীবের আচরণের ওপর পরিবেশের প্রভাব আছে এবং মনুষ্য আচরণও প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই পরিবেশ মনোবিজ্ঞানকে বর্তমানে জাগতিক পরিবেশ ও মনুষ্য আচরণের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত একটি বিজ্ঞান হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
মানুষ সাধারণত শারীরবৃত্তীয়, মনস্তাত্ত্বিক ও আচরণ প্রক্রিয়ার সাহায্যে পরিবেশের জটিলতার প্রতি প্রতিক্রিয়া করে। এজন্য পরিবেশ মনোবিজ্ঞানের গবেষণা এই তিনটি প্রক্রিয়ার উপাদানের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নসমূহের ওপর অনুসন্ধানকার্য চালাচ্ছে। শারীরবৃত্তীয় উপাদানগুলি হল হৃদস্পন্দনের গতির পরিবর্তন, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির কার্যপ্রক্রিয়া, ত্বকের বৈদ্যুতিক ধর্মের প্রতিক্রিয়া, মরণশীলতা ইত্যাদি। মনস্তাত্ত্বিক উপাদানের অন্তর্ভুক্ত হল স্থানের সাথে সংশ্লিষ্ট আচরণ নমুনা, মানসিক প্রতিরূপ, পরিবেশগত পীড়ন, মনোভাবের পরিবর্তন, স্থান, সন্তুষ্টি ইত্যাদি। আর আচরণ উপাদানগুলি হল পরার্থবাদিতা, আগ্রাসন, কর্মসম্পাদন, মনোভাব ইত্যাদি।
বর্তমানে পরিবেশ মনোবিজ্ঞানীরা পরিবেশের অভিজ্ঞতা এবং পরিবেশের প্রতি মানুষের আচরণ এই উভয় বিষয়ে মানুষের মনোভাব নিয়ে কাজ করছেন। তবে এক্ষেত্রে তাঁরা পরিবেশের বিশুদ্ধতা সংরক্ষণ এবং সেই সাথে মানুষের কর্মপরিধির সর্বাধিক বিস্তৃতির প্রতিও লক্ষ রাখছেন।
বিষয়বস্তুর আলোচনায় পরিবেশ মনোবিজ্ঞানীরা জ্ঞানের অন্যান্য শাখার আন্তঃসম্পর্কের প্রেক্ষাপটও বিবেচনায় আনছেন। যেমন জলবায়ু ও আবহাওয়াগত, জাগতিক (physical) ভৌগোলিক এবং বাসস্থান সংক্রান্ত উপাদান যেগুলি অধিবাসীদের ওপর প্রভাব ফেলে পরিবেশ মনোবিজ্ঞানীরা সেগুলি নিয়ে গবেষণা করছেন। তাঁদের গবেষণা পরিবেশের বাস্তব সমস্যার সমাধান এবং এর ওপর ব্যাপকভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ মতবাদ তৈরির দিকে ধাবিত হচ্ছে। এদিক দিয়ে এর মৌলিক ও ফলিত দুটি শাখাই সমানভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে পরিবেশ মনোবিজ্ঞানের স্বাতন্ত্র্য এর বিভিন্নমুখী কর্মতৎপরতার মধ্যেই নিহিত আছে। এসব কর্মতৎপরতা, এর সমালোচনা এবং পরিবর্তনশীল বিষয়বস্তুর আলোকে পরিবেশ মনোবিজ্ঞানকে নিন্মরূপভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
পরিবেশ মনোবিজ্ঞান বিভিন্ন জ্ঞান শাস্ত্রের সমন্বয়ে গঠিত একটি আচরণ বিজ্ঞান। Orientation-এর দিক দিয়ে এটা মৌলিক ও ফলিত দুটি শাখায় বিভক্ত। এর কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয় হল জাগতিক ও সামাজিক পরিবেশ এবং ব্যক্তিগত মনুষ্য আচরণ ও তার অভিজ্ঞতার মধ্যে আন্তঃসম্পর্কের সুসংবদ্ধ পর্যবেক্ষণ (Veitch and Arkeliu, 1995)।