শিল্প ও প্রকৌশল মনোবিজ্ঞানী

 শিল্প ও প্রকৌশল মনোবিজ্ঞানী (Industrial and Engineering Psychology) 

শিল্প ও প্রকৌশল ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের প্রয়োগ প্রথমে বুদ্ধি ও দক্ষতা পরিমাপের অভীক্ষার ব্যবহারের প্রতি সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমানে এর প্রয়োগ ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত হয়েছে। এখন অনেক বড় বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও শিল্প-কারখানা কর্মী নির্বাচন ও তাদের যথাস্থানে নিয়োগের কর্মসূচি প্রতিষ্ঠা করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞানকে কাজে লাগাবার নতুন নতুন পথ খুঁজে পাবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে যে কর্মচারী প্রশিক্ষণের সমস্যা, তাদের কাজকর্মের তত্ত্বাবধান, বিভিন্ন কর্মচারী গোষ্ঠী এবং কর্মবিভাগের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় উপদেশনা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মচারী অসন্তোষ দূরীকরণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠান মনোবিজ্ঞানের জ্ঞানকে কাজে লাগাবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য কোন মনোবিজ্ঞানীকে সরাসরি কোন ব্যবস্থাপকের পদে নিয়োগ করা হয় না। ফলে তাঁরা এসব ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানে জড়িয়ে পড়তে পারেন। তাঁদেরকে আলোচনাকারী ও উপদেষ্টা হিসেবেও নিয়োগ করা হয়।

উন্নত বিশ্বের দেশগুলিতে শিল্প মনোবিজ্ঞানীদের নিজস্ব কারখানা ও সংস্থার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিল্প-কারখানার বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে তাঁরা বিভিন্নমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকেন। যেমন কোন প্রতিষ্ঠানে তাঁরা নির্বাচনী কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন, কোন কারখানায় কর্মচারী প্রশিক্ষণের সুপারিশ করছেন, কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীদের কাজের তত্ত্বাবধানের সমস্যা সমাধানে অংশ নিচ্ছেন, আবার কোন কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীদের মধ্যে মানবিক সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়তা করছেন। এছাড়াও তাঁরা কোন কোন কোম্পানির কারখানায় উৎপাদিত দ্রব্যের প্রতি খরিদ্দারের চাহিদা অনুসন্ধান করেন এবং বিজ্ঞাপনের কার্যকারিতার প্রতি লক্ষ রাখছেন। মনোবিজ্ঞানীরা এভাবে শিল্প-কারখানা ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহের নানাবিধ সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা পালন করছেন। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় কোন শিল্প-কারখানা কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে স্থায়ীভাবে নিয়োজিত মনোবিজ্ঞানীদের পক্ষে একটা সুবিধা হল বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও শিল্প-কারখানায় তাদেরকে প্রায় একই ধরনের সমস্যার সমাধান করতে হয়। মনোবিজ্ঞানীদের প্রতিষ্ঠান এভাবে বিভিন্ন কারখানায় একটা নির্দিষ্ট কর্মব্যবস্থা হিসেবে গড়ে উঠেছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে শিল্পক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞানকে কাজে লাগাবার একটি নতুন উপায় উদ্ভাবিত হয়েছে। মনোবিজ্ঞানের এই প্রয়োগ কর্মসূচিকে কখনও কখনও প্রকৌশল মনোবিজ্ঞান আবার কখনও মানব প্রকৌশল বলা হয়। এ শাখার প্রধান আলোচ্য বিষয় হল মেশিন বা যন্ত্রপাতি পরিকল্পনা (design of equipments) এবং ঐ যন্ত্র পরিচালনার জন্য ব্যক্তিবিশেষের উপযোগিতা। এভাবে মনোবিজ্ঞানীরা বিমানের ককপিটের নকশা, স্টোভ ও রেফ্রিজারেটর এবং অন্যান্য মেশিনের নকশা তৈরির কাজে জড়িত হয়ে পড়েন। যন্ত্রপাতির নকশা তৈরি সমস্যায় মনোবিজ্ঞানীরা প্রত্যক্ষণ, শিক্ষণ, ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধি ও দক্ষতা পরিমাপ প্রভৃতি ক্ষেত্রের জ্ঞানকে কাজে লাগাতে সক্ষম হন। অবশ্য এ ধরনের অভিজ্ঞতাকে তারা সামরিক বাহিনীর জটিল যন্ত্রপাতি ও আধুনিক অস্ত্র পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে কাজে লাগিয়ে থাকেন। যানবাহন, স্টোভ, লেদ মেশিন, ক্রেন, ছাপাখানা প্রভৃতি যন্ত্রপাতির নকশা তৈরির কাজে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞানকে কাজে লাগানো হয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url