পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞান
পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞান (Experimental Psychology)
পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞান মনোবিজ্ঞানের একটি মৌলিক অথচ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ শাখা। এর প্রধান উদ্দেশ্য পরীক্ষণের মাধ্যমে আচরণের মূল কারণ খুঁজে বের করা। আচরণ সম্পর্কিত দুটি ঘটনার মধ্যে কি ধরনের কার্যকারণ সম্পর্ক বিদ্যমান বৈজ্ঞানিক পন্থায় তা অনুসন্ধানের জন্য নিয়ন্ত্রিত অবস্থার মধ্যে যে পর্যবেক্ষণ পরিচালনা করা হয় তাই পরীক্ষণ। পরীক্ষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য যথাসম্ভব নির্ভুল, ব্যক্তিনিরপেক্ষ এবং বস্তুনিষ্ঠ হয়। কেননা এতে নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় একটিমাত্র চলকে পরিবর্তন করে কি ফল পাওয়া যায় তাই অনুসন্ধান করা হয়। পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞান এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে এবং আচরণ সম্পর্কিত সকল তত্ত্বই পরীক্ষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত হয়। পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে জীবের আচরণের মৌলিক কারণ খুঁজে বের করা হয়। এই শাখার প্রধান আলোচ্য বিষয় হল সংবেদন, প্রত্যক্ষণ, শিক্ষণ, প্রেষণা, স্মৃতি এবং আচরণের শারীরবৃত্তীয় ভিত্তি কি তা আলোচনা করা; আমরা কিভাবে পরিবেশ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করি, পরিবেশকে কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, আচরণ কিভাবে পরিমার্জিত বা সংশোধিত হয় ইত্যাদি। আমাদের আচরণের পিছনে কি প্রেষণা কাজ করে, কিভাবে আমাদের রায়ুতন্ত্র প্রতিটি আচরণের পশ্চাতে কাজ করে যাচ্ছে, একজন পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞানী এর প্রতিটি বিষয় জানতে চেষ্টা করেন। আচরণ সম্পর্কে সঠিক তথ্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞানীরা পরীক্ষণে নিয়ন্ত্রণের সাহায্য নেন। অনেক সময় তাঁরা প্রাণীকে পরীক্ষণ পাত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। পরীক্ষণে প্রাণী ব্যবহারের একটি কারণ হল প্রাণীকুলের মধ্যে সরল থেকে জটিল আচরণের বিকাশ সম্পর্কে জানতে পারলে প্রাণী আচরণের প্রক্রিয়াটা সহজে বোঝা যায়। তুলনামূলক পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন জাতের প্রাণীর আচরণের পার্থক্য নির্ণয় করেন। শারীরবৃত্তীয় মনোবিজ্ঞানীরা মানুষ ও প্রাণীর শরীরস্থান ও শরীর কাঠামো এবং তাদের কার্যাবলী আলোচনা করেন। এসব ব্যাপারে সার্বিক তথ্য উদ্ঘাটনে সকলেই পরীক্ষণ পদ্ধতি অনুসরণ করেন।