মনোবিজ্ঞানে নৈতিক আদর্শের নীতিমালা

মনোবিজ্ঞানে নৈতিক আদর্শের নীতিমালা (Ethical Principles in Psychology)

মনোবিজ্ঞানের লক্ষ্য অর্জনে মনোবিজ্ঞানীকে নৈতিক আদর্শের কিছু নীতি মেনে চলতে হয়। আন্তর্জাতিক মনোবৈজ্ঞানিক সমিতি (American Psychological Association-APA)-এর সংবিধানের মুখবন্ধে ১৯৮১ সালে সারাবিশ্বের মনোবিজ্ঞানীদের নৈতিক অবস্থান বর্ণনা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে মনোবিজ্ঞানীরা ব্যক্তির মান-মর্যাদা এবং তার নৈতিক আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। তাঁরা মানুষের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা এবং তা সংরক্ষণে প্রচেষ্টা চালাবেন। মানুষের আচরণ, ব্যক্তির নিজের এবং অন্যের সম্পর্কে যে বোধশক্তি আছে সে সম্পর্কে মনোবিজ্ঞানীরা অধিক জ্ঞান অর্জন করবেন। আর মানবকল্যাণে তাঁদের এ জ্ঞান কাজে লাগাতে তাঁরা প্রতিশ্রুতবদ্ধ।

যারা মনোবিজ্ঞানীদের কাছে সেবা নিতে আসে এবং মনোবিজ্ঞানীরা যাদের ওপর গবেষণা পরিচালনা করেন তাদের সকলের কল্যাণ সুরক্ষায় মনোবিজ্ঞানীরা সবসময় সচেষ্ট থাকবেন।

APA-এর সংবিধানে যে ১০টি নৈতিক আদর্শের নীতির কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে নিন্মলিখিত ৩টিই প্রধান।

(১) গবেষণালব্ধ তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা : যাদের নিয়ে গবেষণা করা হয়। মনোবিজ্ঞানীরা তাদের সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করতে বাধ্য। উপদেশনা কিংবা মনোচিকিৎসা নিতে যারা মনোবিজ্ঞানীদের কাছে আসে, নিজ কর্মক্ষেত্রে যাদের ওপর অনুসন্ধানকার্য চালানো হয়, যারা ছাত্র এবং যারা গবেষণায় অংশগ্রহণ করে তাদের সকলের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মনোবিজ্ঞানীরা অবশ্যই গোপন রাখবেন যাতে এরূপ তথ্য প্রকাশে সমাজের কোন ক্ষতি না হয়।

(২) গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের অধিকার সুরক্ষা : এতে বলা হয়েছে মনোবিজ্ঞানের গবেষণায় সব সময় সমাজের উপকার এবং পারীক্ষের মান-মর্যাদা ও তাদের কল্যাণের কথা বিবেচনায় রাখতে হবে। পারীক্ষদের সাথে কোনরূপ প্রতারণা বা ছল-চাতুরী করা যাবে না। তবে তথ্য প্রকাশে যদি সমাজের সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে কেবল সে ক্ষেত্রেই গবেষক তথ্য গোপন রাখবেন।

এক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানীরা শুধু সমাজের কল্যাণের কথাই মনে রাখবেন। মনোবিজ্ঞানের গবেষণালব্ধ তথ্য সমাজের কি কি উপকারে আসতে পারে সে সম্পর্কে APA মার্কিন কংগ্রেসের কাছে ১৯৮১ সালে বেশ কিছু তথ্য পেশ করে। যেমন চাক্ষুষ ভ্রান্তি প্রত্যক্ষণে বৈজ্ঞানিকরা কতিপয় সাধারণ জ্ঞান অর্জন করলে তা সরাসরি বিমান দুর্ঘটনা অনেক কমিয়ে আনতে সাহায্য করে, ব্যক্তিত্বের বস্তুনিষ্ঠ পরিমাপ পদ্ধতি, বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে উপযুক্ত কর্মী নির্বাচনে বিশেষ অবদান রাখে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে মনোভাব এবং আচরণ পরিবর্তনের কৌশল প্রয়োগ করে দেখা গেছে উচ্চ রক্তচাপ হ্রাসে এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনে তা অনেক সহায়ক। এছাড়া ভোক্তার মনমেজাজ পরিমাপ, বিদ্যালয়ের প্রতি শিক্ষার্থী শিশুদের আকর্ষণ বৃদ্ধি, হাসপাতালের চাপমূলক পরিস্থিতি হ্রাস প্রভৃতি বিষয়গুলি সমাজের অনেক উপকারে এসেছে।

(৩) প্রাণীর স্বাস্থ্য : আরাম-আয়াস এবং তাদের প্রতি মানবিক আচরণ-সমুন্নত রাখা প্রাণী নিয়ে গবেষণার সময় মনোবিজ্ঞানীরা প্রাণীদের শারীরিক স্বাস্থ্য, তাদের আরাম-আয়াসের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন, তাদের জীবনের নিরাপত্তা বিধান করবেন এবং সর্বোপরি তাদের প্রতি মানবিক আচরণ করবেন।

মনোবিজ্ঞানের গবেষণা মানুষের জন্য অভূতপূর্ব কল্যাণ বয়ে আনছে। তা সত্ত্বেও এ ধরনের গবেষণায় সবসময় মানুষ ও প্রাণীর সুস্বাস্থ্য, আরাম-আয়াস ও জীবনের নিরাপত্তা বিধানে মনোবিজ্ঞানীরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url