মনোবিজ্ঞানের লক্ষ্যসমূহ
মনোবিজ্ঞানের লক্ষ্যসমূহ (Goals of Psycholgy)
বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার ন্যায় মনোবিজ্ঞানও মানুষের কল্যাণে আচরণ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান আহরণের প্রচেষ্টায় নিয়োজিত। আর মানুষের জীবনমান উন্নয়নে মনোবিজ্ঞান এ ধরনের নিন্মলিখিত চারটি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে:
(১) মানুষের আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়ার বর্ণনা;
(২) এগুলির ব্যাখ্যাদান;
(৩) আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা;
(৪) এগুলি সংশোধন (modify) করা এবং মানবকল্যাণে তা কাজে লাগানো।
প্রথমত, আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়ার বর্ণনায় মনোবিজ্ঞানীরা এগুলি পর্যবেক্ষণ করেন এবং তার পরিমাপ ও শ্রেণীবিভাগ করেন। যেমন শিশু আচরণের বর্ণনায় শিশু কার সাথে কথা বলে, কিভাবে কোন খেলাতে কত সময় ব্যয় করে, কার সাথে বন্ধুত্ব করে তা পর্যবেক্ষণ করে লিপিবদ্ধ করা হয় ও পরিমাপ করা হয়। তার সতর্কতা নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তার মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক তরঙ্গের রেখাচিত্র (electroencephalograph) ব্যবহার করা হয়; অভীক্ষা প্রয়োগ করে আচরণগত সমস্যা চিহ্নিত করা হয় অথবা তার ব্যক্তিত্ব এবং বুদ্ধি পরিমাপ করা হয় ইত্যাদি। এ ধরনের প্রত্যেক ক্ষেত্রের মুখ্য উদ্দেশ্য হল বস্তুনিষ্ঠ পদ্ধতিতে যথার্থ তথ্য সংগ্রহ করা।
দ্বিতীয়ত, মনোবিজ্ঞান পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্যের ব্যাখ্যা প্রদান করে এবং একটা মতবাদ প্রণয়ন করে যার মাধ্যমে অন্যদের সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্যের ব্যাখ্যা দান করা হয়। এ কাজটি সবচেয়ে কঠিন। কেননা কোন একটি আচরণের পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। যেমন কোন বন্ধু যদি তার বন্ধুর সালামের জবাব না দেয় তাহলে ধরে নেয়া হয় যে সে পূর্ব নির্ধারিত কোন বিষয় নিয়ে চিন্তা করছিল, কিংবা সে হয়তো বন্ধুর সালামের শব্দ শুনতে পায়নি অথবা অতীত কোন ঘটনা নিয়ে বন্ধুর সাথে তার মনোমালিন্য আছে। মনোবিজ্ঞানের কাজ আচরণের যথার্থ কারণ খুঁজে বের করা। এভাবে কোন আচরণের ব্যাখ্যা খুঁজতে গিয়ে মনোবিজ্ঞানীরা কারণারোপ মতবাদের (Attribution Theory) বিকাশ ঘটিয়েছেন। অবশ্য আচরণের যে কোন কারণ খুঁজে পেতে মনোবিজ্ঞানীরা সব সময় বস্তুনিষ্ঠ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করেন।
তৃতীয়ত, আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে মনোবিজ্ঞানীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেন। মনোবিজ্ঞানীরা যেসব মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেছেন তার কাজই হল আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা। যেমন বলবর্ধক মতবাদে বলা হয় কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে কোন আচরণ (প্রতিক্রিয়া) পুরস্কৃত হলে পরবর্তীকালে অনুরূপ পরিস্থিতিতে খুব সহজেই সেই আচরণের পুনরাবির্ভাব ঘটে।
মনোবিজ্ঞানের চতুর্থ এবং শেষ লক্ষ্য হল আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়া সংক্রান্ত অর্জিত জ্ঞানকে মানুষের কল্যাণে কাজে লাগানো। গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রাপ্ত জ্ঞান আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রায় প্রত্যেকেই স্পর্শ করে। যেমন শিশুর পরিচর্যা, স্কুল ও কলেজের ভর্তি, শ্রেণীকক্ষের শিক্ষা, বেতার টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন, বিমানের ককপিটে মেশিনের ডিজাইন, শিল্প, চিকিৎসা, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিরোধের নিষ্পত্তি ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে মনোবিজ্ঞানীরা মানবকল্যাণে প্রভূত অবদান রাখছেন।