পরিমাপন এবং এর পর্যায়সমূহ
পূর্ব-নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী কোনো বৈশিষ্ট্য, বস্তু বা ঘটনাকে সংখ্যা বা প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করাকে পরিমাপন বলে।
বৈজ্ঞানিক ক্যাম্পবেলের মতে,
পরিমাপন হলো কোনো নিয়ম অনুসারে কোনো বস্তু বা ঘটনাতে সংখ্যা আরোপ করা।
যেমন: কোনো বইকে তার পৃষ্ঠার সংখ্যা, উচ্চতা, বিস্তার, ওজন ইত্যাদি দ্বারা পরিমাপ করা যেতে পারে।
পরিমাপন স্কেল বা পর্যায়
যে আদর্শ মানের সাথে তুলনা করে কোনো বস্তু বা ঘটনাকে সংখ্যায় প্রকাশ করা হয় তাকে পরিমাপন স্কেল বলা হয়। কোনো কিছু পরিমাপ করতে পরিমাপন স্কেল ব্যবহৃত হয়।
যেমন: মিরাজের শরীরে ১০২° ফারেনাইট জ্বর রয়েছে। এখানে মিরাজের জ্বর মাপার জন্য ফারেনহাইট স্কেল ব্যবহার করা হয়েছে।
বৈজ্ঞানিক স্টিভেন্স ১৯৪৬ সালে সর্বপ্রথম কতকগুলো মানদণ্ডের ভিত্তিতে পরিমাপন স্কেলকে চারটি ভাগে ভাগ করেন। যেমন —
- নামসূচক স্কেল (Nominal scale)
- ক্রমসূচক স্কেল (Ordinal scale)
- ব্যাপ্তিসূচক স্কেল (Interval scale)
- অনুপাতসূচক স্কেল (Ratio scale)
পরিমাপনের পর্যায়সমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১। নামসূচক স্কেল:
যে পরিমাপন স্কেলের সাহয্যে কোনো বৈশিষ্ট্য, বস্তু বা ঘটনাকে প্রতীক বা সংখ্যা দ্বারা একটি বিশেষ পরিচিতি প্রদান করা হয়, তাকে নামসূচক স্কেল বলে।
এক্ষেত্রে চলকের মানগুলোর ক্রম, যোগ বা বিয়োগ গুণ বা ভাগ কোনো অর্থ বহন করে না। লিঙ্গ, শিক্ষা, মেধা, গাড়ির মডেল নম্বর, মোবাইল সেটের নম্বর, কক্ষ নম্বর ইত্যাদি নামসূচক স্কেলের উদাহরণ।
২। ক্রমসূচক স্কেল:
যে পরিমাপন স্কেলের সাহায্যে কোনো বৈশিষ্ট্য, বস্তু বা ঘটনাকে প্রতীক বা সংখ্যা দ্বারা একটি বিশেষ পরিচিতি প্রদান এবং মানের ভিত্তিতে ক্রম-অনুসারে বিন্যস্ত করা হয়, তাকে ক্রমসূচক স্কেল বলে।
উদাহরণস্বরূপ: কোনো একটি জেলার জনসমষ্টিকে ধর্ম ও লোকসংখ্যার ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করে লোকসংখ্যার ক্রম-অনুযায়ী সংখ্যায় প্রকাশ করতে পারি; যেমন: মুসলিম= 01, হিন্দু = 02 ইত্যাদি।
৩। ব্যাপ্তিসূচক স্কেল:
যে স্কেলের সাহায্যে পরিমাণবাচক চলককে সমান ব্যবধান (equal interval) বজায় রেখে ক্রমানুসারে সাজানো হয় এবং কাল্পনিক শূন্য (Arbitary Zero) ব্যবহার করা হয়, তাকে ব্যাপ্তিসূচক স্কেল বলে।
উদাহরণ: ধরা যাক, এইচএসসি পরীক্ষায় মি. আদু বাংলায় শূন্য পেয়েছে। তার মানে এই নয় যে, সে বাংলা কিছুই জানে না। তাই এই শূন্যকে পরম শূন্য (absolute zero) হিসাবে ধরা যাবে না। অন্যদিকে ০° ডিগ্রি সেলসিয়াস বলতে কিন্তু তাপহীন অবস্থা বোঝায় না। থার্মোমিটার, রক্তচাপ পরিমাপন, মাস, দিন, পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর ইত্যাদি পরিমাপের স্কেল হলো ব্যাপ্তিসূচক স্কেল।
৪। অনুপাতসূচক স্কেল:
যে পরিমাণ স্কেলের সাহায্যে পরিমাণ বাচক চলককে সমান সংখ্যক এককে পার্থক্য বা শ্রেণিগত বিভেদ পরিমাপ করা হয় এবং শূন্যকে পরম শূন্য ধরা হয়, তাকে অনুপাত সূচক স্কেল বলে।
উদাহরণ: ধরা যাক এইচএসসি পরীক্ষায় কোনো কলেজের তিনটি সেকশনে জিপিএ-5 প্রাপ্ত ছাত্রদের সংখ্যা যথাক্রমে 4, 2, 0, এখানে দেখা যাচ্ছে যে ১ম বিভাগে জিপিএ-১ প্রাপ্ত ছাত্রদের সংখ্যা দ্বিতীয় বিভাগের জিপিএ-১ প্রাপ্ত ছাত্রদের তুলনায় দ্বিগুণ। তৃতীয় জি.পি.এ-5 প্রাপ্ত ছাত্রসংখ্যা (০) দ্বারা বোঝায় ঐ সেকশনে কোনো ছাত্র-ছাত্রী জি.পি.এ-5 পায়নি। এ স্কেলে শূন্য অর্থ হলো পরম শূন্য।
পরিবারের সংখ্যা, ওজন, উচ্চতা কাজের প্রাবল্য, দৈর্ঘ্য, বয়স, সময় ইত্যাদি নির্দেশক চলকগুলোকে অনুপাত-সূচক স্কেলে পরিমাপ করা যায়। তবে বিভিন্ন পরিসংখ্যানবিদগণের মতে শ্রেণিসূচক স্কেল ও অনুপাত-সূচক স্কেলের মধ্যে পার্থক্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়।