স্মৃতিভ্রংশ

 Amnesia: এক্ষেত্রে ব্যক্তি আত্মসচেতনতাকে অবদমিত করে এবং তার অতীত জীবনের তথ্যগুলো সম্পূর্ণ বা আংশিক ভুলে যায়। এ ধরনের স্মৃতিভ্রংশ অবশ্য সাইকোসিসে ও মস্তিষ্কের রোগ বা আঘাতজনিত কারণে ঘটতে পারে। তবে মস্তিষ্কের রোগ বা আঘাতজনিত কারণে স্মৃতিভ্রংশ হলে সে স্মৃতি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয় না। কিন্তু বিচ্ছিন্নতামূলক নিউরোসিসে স্মৃতিভ্রংশের রোগীর অতীত জীবনের অভিজ্ঞতা রোগীর মন থেকে সম্পূর্ণ মুছে যায় না বা হারিয়ে যায় না, অবদমিত হয়ে থাকে মাত্র। সম্মোহন-প্রক্রিয়া বা সম্মোহনকারী ঔষধের সাহায্যে এ ধরনের মনোব্যাধিমূলক বিস্মৃতি দূর করা যায়। কোনো পীড়নমূলক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এরূপ লক্ষণের উদ্ভব হয়। Kiersch (1962) দেখেছেন যে, পীড়নমূলক পরিস্থিতিকে এড়াবার জন্য ব্যক্তি কখনও কখনও স্মৃতিভ্রংশের ভান করে। তিনি এক সমীক্ষায় ৯৮ জন স্মৃতিভ্রংশের রোগীর উপর গবেষণা করে দেখেন যে, তাদের মধ্যে ৪১ জনই ছিল ভান বা কৃত্রিম।

স্মৃতিভ্রংশের লক্ষণাবলি: 

মনোব্যাধিমূলক বিস্মৃতি প্রতিক্রিয়ার ব্যক্তি তার নাম স্মরণ করতে পারে না, তার বয়স কত, কোথায় বাসা জানে না, পিতামাতাদের চিহ্নিত করতে পারে না এবং তার আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের চিনতে পারে না। তবে তার আচরণের প্রক্রিয়া যেমন, লিখতে পারা, কথা বলতে পারা ইত্যাদি স্বাভাবিক থাকে। দীর্ঘস্থায়ী বিস্মৃতির (Fugue) ক্ষেত্রে ব্যক্তি অনেক সময় তার পুরোনো ঘরবাড়ি পরিবেশ ছেড়ে কয়েক দিন কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক বছর নতুন পরিবেশে নতুনভাবে জীবন কাটায়। ব্যক্তি কীভাবে নতুন পরিবেশে আসলো, তা সে বলতে পারে না।

স্মৃতিভ্রংশের কারণসমূহ: 

এ ধরনের স্মৃতিভ্রংশের কারণ হলো রোগীর বেদনাময় অথবা, ব্যর্থতাময় পরিবেশকে ভুলে থাকার ইচ্ছা। রোগী যখন মনে করে তার গৃহপরিবেশ তার পক্ষে অত্যন্ত দুর্বিষহ, জীবন নিরানন্দ ও কঠিন হয়ে উঠেছে, যেখান থেকে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া নিষ্কৃতি পাওয়ার আর কোনো উপায় নেই, তখন সে আচমকা সবকিছু ভুলে যায় অথবা অবদমিত করে রাখে। অনেক সময় মধ্যবয়সি বা প্রৌঢ়ত্বের শেষের দিকে একজন মানুষকে রাস্তায় ঘুরতে দেখা যায়- যে আত্মপরিচয় ভুলে গেছে। মস্তিষ্কের কোনো স্নায়বিক বিকৃতি না-থাকলে সে অবশ্যই মনোব্যাধিমূলক বিস্মৃতি প্রতিক্রিয়ার রোগী।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url