নিঃসম্ভাবনামূলক নমুনায়ন পদ্ধতিসমূহ

পরীক্ষামূলক অভীক্ষা পরিচালনার জন্য সমগ্রক থেকে নমুনায়নের মাধ্যমে একটি প্রতিনিধিত্বশীল ছোট দল নির্বাচন করতে হবে। নমুনায়ন কৌশল প্রধানত দুই ধরনের। যথা- সম্ভাবনা নমুনায়ন ও নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন। নিম্নে নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন আলোচনা করা হলো-

নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন

যে নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় তথ্যবিশ্বের সকল উপাদানের নমুনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সমান সুযোগ থাকে না তাকে বলে নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন। এতে গবেষণার উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে নমুনা নির্বাচন করা হয়। যেহেতু সকলের নমুনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকে না তাই এ প্রক্রিয়ায় পক্ষপাতিত্বের সুযোগ থাকে। ফলে এর মাধ্যমে গোটা তথ্যবিশ্ব সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া নাও যেতে পারে। নমুনা তথ্যবিশ্বের প্রতিনিধিত্বমূলক না হওয়ায় প্রাপ্ত তথ্য সমগ্রকের ক্ষেত্রে সামান্যীকরণ করা যায় না।

সামাজিক ও গুণগত গবেষণায় নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন নমুনা নির্বাচনের একটি অন্যতম পদ্ধতি যা সহজেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। উদাহরণস্বরূপ ভাসমান শিশুদের শিক্ষার উপর একটি গবেষণা পরিচালিত হবে। কিন্তু ভাসমান শিশুদের কোন তালিকা নেই এবং করাও সম্ভব নয়। অতএব, এক্ষেত্রে সম্ভাবনা নমুনায়ন প্রয়োগ সম্ভব নয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন প্রক্রিয়া প্রয়োগের কোন বিকল্প নেই। নিচে বিভিন্ন ধরনের কয়েকটি নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন প্রক্রিয়া আলোচনা করা হল।

১. আকস্মিক বা ঘটনাক্রমিক নমুনায়ন (Accidental sampling): 

এটি একটি অ-সম্ভাবনাত্মক (Non-Probability) নমুানায়ন যা সমগ্রকের প্রতিনিধিত্ব করে না। একে Incidental sampling, chunk sampling Grab sampling বা hap hazard sampling ও বলা হয়ে থাকে। গবেষক ঘটনাক্রমে বা আকস্মিকভাবে যাদের মুখোমুখি হয়ে থাকেন বা সংযোগ আসে শুধু তাদেরকেই এ পদ্ধতি একক হিসেবে নির্বাচিত করে থাকে। কোনো বিষয়ে একেবারে ভিত্তিহীন অনুমানের চেয়ে কিছুটা তথ্যভিত্তিক অনুমানের জন্য এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

উদাহরণস্বরূপ, কোনো টেলিভিশন অনুষ্ঠানের সাফল্য অথবা কোনো ভোগ্য পণ্যের গুণাগুণ সম্বন্ধে জনমত যাচাই করার জন্য অনেক সময় আকস্মিক নমুনায়ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

২. সুবিধাজনক নমুনায়ন (Convenience sampling): 

যে নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় গবেষক সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম-কানুন ছাড়াই নমুনা চয়ন করে তাকে সুবিধাজনক নমুনায়ন বলে। এক্ষেত্রে গবেষক বা মাঠকর্মী নমুনায়নের ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে যে কাউকে নমুনা হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। 

যেমন: স্নাতক সম্মান পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীরা যেসব গবেষণা করে থাকে সেগুলোর নমুনায়ন হয়ে থাকে সুবিধাজনকই নমুনায়ন পদ্ধতিতে। এগুলো দ্বৈবায়ন পদ্ধতিতে হয় না।

৩. স্নোবল নমুনায়ন (Snowball sampling): 

তথ্য সংগ্রহকারীর প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তথ্য সংগ্রহের পর তাদের কাছ থেকে আরো অংশগ্রহণকারীর ঠিকানা পাওয়া যায়, যারা তথ্য দিতে আগ্রহী। এভাবে একজনের মাধ্যমে আরো অংশগ্রহণকারী সম্পর্কে জেনে নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে নমুনায়নের পদ্ধতিকে বলা হয় স্নোবল নমুনায়ন। 

উদাহরণ: মাদকাসক্ত এবং পতিতাদের উপর পরিচালিত জরিপ।

৪. উদ্দেশ্যমূলক নমুনায়ন (Purposive sampling): 

যে নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় গবেষক বা অনুসন্ধানকারী নিজস্ব বিচারবুদ্ধি ও স্বাধীনতা অনুযায়ী নমুনা বাছাই করে, সেই প্রক্রিয়াকে উদ্দেশ্যমূলক নমুনায়ন বলে। এখানে সব এককের নির্বাচিত হওয়ার সমান সম্ভাবনা যেমন থাকে না তেমনি পরিসংখ্যানগতভাবে আবেদনহীন; অতিরিক্ত ব্যয় সংকোচনমূলক একটি পদ্ধতি হিসেবে এটি পরিগণিত হয়। এই পদ্ধতিতে অনুসন্ধানকারীগণ নমুনায়ন এককগুলো নির্বাচন করেন এবং সেগুলোকে সমগ্রকের বিশেষ প্রতিনিধিত্বমূলক একক বলে ধরে নেয়া হয়। কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য বা বিশেষ সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যই এই পদ্ধতিতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। 

উদ্দেশ্যমূলক নমুনায়ন আবাব দুই প্রকার। 

যথা: ১) বিচার্যমান নমুনায়ন এবং ২) কোটা নমুনায়ন।

ক. বিচার্য মূলক নমুনায়ন (Judegement sampling): যখন গবেষক নিজের জ্ঞান-অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করে সমগ্রকের যথেষ্ট প্রতিনিধিত্বকারী নমুনা চয়ন করে এবং ইচ্ছামাফিক একক নির্বাচন করেন তখন তাকে বিচার্যমূলক নমুনায়ন বলা হয়ে থাকে।

খ. আনুপাতিক অংশ বা কোটা নমুনায়ন (Quota sampling): কোন সমগ্রহকে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য যেমন: লিংগ, পেশা, আয়, ধর্ম ইত্যাদির ভিত্তিতে কতগুলো স্তরে বিভক্ত করে প্রত্যেক স্তর হতে আনুপাতিক হারে নমুনা সংগ্রহের প্রক্রিয়াকে কোটা নমুনায়ন বলে। 

যেমন: ৩০০ জন কৃষক, ২০০ জন শিক্ষক ও ১০০ জন ডাক্তার মোট ৬০০ জন হতে ৬০ জনের নমুনা আনুপাতিকহারে বাছাই করা হলে ৩০ জন কৃষক, ২০ জন শিক্ষক ও ১০ জন ডাক্তার নমুনায় অন্তর্ভুক্ত হবে। ইহাই কোটা নমুনায়ন।

উপসংহার: 

পরিশেষে বলা যায় যে, নমুনা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল সমগ্রকে সাধারণিকরণের ক্ষেত্রে সম্ভাব্যতাহীন নমুনায়ন একটু পিছিয়ে আছে। সাধারণিকরণের প্রথম শর্তই হলো নমুনা জনসমষ্টির সাথে প্রতিনিধিত্ব করছে কিনা তা নিশ্চিত করা। নমুনা যদি জনসমষ্টিকে প্রতিনিধিত্ব করে এবং ফলাফল যদি যুক্তিসম্পন্ন হয় তাহলে সে ফলাফল অবশ্যই সাধারণিকরণ হতে পারে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url